দেশ বিদেশ

ডিএসইর শেয়ার ক্রয় নিয়ে যা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে দর প্রস্তাবে অংশ নেয় চীন ও ভারতের দুইটি জোট। ইতিমধ্যেই গত সোমবার চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই। শিগগিরই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রস্তাবনা পাঠাবে ডিএসই।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম বলেন, চীনা জোটকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএসইসিতে এই প্রস্তাবনা পাঠাবো। এই প্রস্তাবের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা আইনগতভাবে যাচাই করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। বিএসইসির সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। চীনা জোট ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি বেশি দর দিয়ে শেয়ার কেনার প্রস্তাব করায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ তা গ্রহণ করে। পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদন করা হয়। জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার জন্য ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৩ করা হয়। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার নেয়ারও এবং তাদের জন্য মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বা ব্রোকারেজ মালিকরা স্টক এক্সচেঞ্জটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকবেন। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার পরবর্তীতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেয়ার জন্য ২০১৫ সালে এক বছর সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু করে বিএসইসি। পরে ৬ মাসে করে আরো দুই বার সময় বাড়িয়েছে কমিশন। যা আগামী ৮ই মার্চ শেষ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক এবং ফ্রন্টিয়ার মিলে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, দুই জোটের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে প্রথমটিকেই বেছে নিয়েছে ডিএসই। তবে এটির চূড়ান্ত রূপ দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন লাগবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হলে প্রস্তাব দুটি নিয়ে পার্থক্য খুঁজতে থাকে ডিএসই। দুটি প্রস্তাব থেকে দেখা গেছে, বড় বড় ৭টি দিক থেকে পিছিয়ে আছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জোট। একই সঙ্গে এই জোটের প্রস্তাবে ভঙ্গ করা হয়েছে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ সংশ্লিষ্ট শর্ত। আইন ভেঙ্গে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে তারা। যদিও আইন মেনে সব দিতে প্রস্তুত চীনের জোট বা কনসোর্টিয়াম। এ বিষয়ে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি না হলেও পুঁজিবাজারের বিকাশের স্বার্থে বিএসইসি কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।
৭টি বড় বড় পার্থক্য: প্রথমত চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত জোট শেয়ার কিনতে চেয়েছে ২২ টাকা দরে, আর ভারতী ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন জোট চেয়েছে ১৫ টাকা দরে। দ্বিতীয়ত, প্রথম পক্ষ কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই দীর্ঘ মেয়াদে অংশীদার হতে চায়। অন্যদিকে দ্বিতীয় পক্ষ বিনিয়োগের ৫ বছর পর বিনিয়য়োগ তুলে নেয়ার শর্ত আরোপ করেছে। আবার সেটি হবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে। তৃতীয়ত, প্রথম পক্ষ জোটের মাধ্যমে শেয়ার কিনতে আগ্রহী। আর দ্বিতীয় পক্ষ এনএসই সরাসরি শেয়ার কেনার বদলে এনএসই স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড নামে নতুন কোম্পানি করতে চায়। সে ক্ষেত্রে এনএসই ডিএসই’র পার্টনার হবে না। অন্যদিকে জোটে নাসডাকের নাম ব্যবহার করলেও তার কোনো শেয়ার নেই। যদিও গত ৪ বছর যাবৎ তারা ডিএসইর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। চতুর্থত, প্রথম পক্ষ ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব অভ্যন্তরীণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদন পেয়েছে। আর দ্বিতীয় পক্ষ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি।
পঞ্চমত, প্রথম পক্ষ আইন অনুযায়ী পর্ষদে একটি আসন চেয়েছে। আর দ্বিতীয় পক্ষ দুটি আসনের জন্য শর্ত জুড়ে দিয়েছে, যা স্কিমের পরিপন্থি। ষষ্ঠত, প্রথম পক্ষ প্রযুক্তিগতভাবে ৮টি জায়গায় উন্নয়নের কথা বলেছে। এর জন্য তারা ৩৭.১১ মিলিয়ন ডলার বিনা শর্তে বিনিয়োগ করার কথা বলেছে। আর ভারতীয় প্রস্তাবে কোনো প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফরম বা সিস্টেম না দিয়ে প্রস্তাবগুলো কেবল পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রস্তাবিত এই অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি করার কথা বলেছে। সপ্তমত, নতুন পণ্য প্রবর্তন ও বাজার উন্নয়নের জন্য সহায়তা দিতে কোনো শর্ত রাখেনি। আর দ্বিতীয় পক্ষ ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এর আগে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স, সিডিসি, কেএফডব্লিউ, আইএফসি, কিং ওয়ে ক্যাপিটাল এবং বাংলাদেশের স্কয়ার গ্রুপসহ খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে আবেদন করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status