দেশ বিদেশ

‘উন্নয়ন ভোগান্তিতে’ নগরবাসী, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সুদীপ অধিকারী

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে চলছে বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাটে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার কথা থাকলেও, অনেক জায়গায়ই দেখা যায় রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী মাটি, বালি, পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। গাড়ির চাকায় সেগুলো পিষ্ট হয়ে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। আর এই ধুলার কারণেই ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, সাধারণ পথচারীদের। ধুলার রাজত্বে অসহায় শহরবাসীর একদিকে বেড়েছে ভোগান্তি, সঙ্গে রোগবালাইও। বেসরকারি চাকরিজীবী নাঈমুর রহমান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মিরপুর-১২ নম্বর সেক্টরে। কাজের জন্যই প্রতিদিন তাকে মিরপুর থেকে কাওরান বাজারে যেতে হয়। সাধারণত যাতায়াতে তার ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগার কথা থাকলেও, এখন তিনি প্রতিদিন ঘণ্টা দেড়েক আগেই বাসা থেকে বের হন। নাঈমুর বলেন, আগেও মিরপুরে যানজট ছিল, কিন্তু এখন এর মাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার গত বছরের নভেম্বর থেকে মেট্রো রেলের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের ৩ ও ৪নং অংশের কাজের জন্য বর্তমানে উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তায়, মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। আর এই কাজের জন্যই নিরাপত্তার স্বার্থে, রাস্তার মাঝখান বরাবর ১১ মিটার চওড়া করে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। এতে রাস্তা এতো সরু হয়েছে, যে যানবহন চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরো রাস্তাজুড়েই থাকে যানবহনের লম্বা লাইন। যানজটের কারণে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই চোখে ঘুম চলে আসে আরেক চাকরিজীবী ইয়াকুব আলীর। তিনি বলেন, উন্নয়ন কে না চায়। সবাই চায় দেশের উন্নয়ন হোক। দেশের উন্নয়ন হলে, দেশের মানুষেরও উন্নতি হবে। কিন্তু এই উন্নয়ন কাজের জন্য সৃষ্ট জনসমস্যার কথাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখা উচিত। এই কাজে সৃষ্ট ধুলা নিধনের জন্য রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও এই পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে নাই। শুষ্ক মৌসুমে ধুলার এই জ্বালা আবার বর্ষা শুরু হলে পড়তে হবে কাঁদা-পানির যন্ত্রণায়। মিরপুরের মতোই রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, বনশ্রী, কল্যাণপুর, গাবতলী, ফার্মগেটসহ নানা স্থানে চলছে সংস্কার কাজ। শুটিং ক্লাবের সামনে থেকে গুলশান এক নম্বরের দিকে যেতেই দেখা যায় রাস্তা খুঁড়ে সংস্কার কাজ চলছে। এতে নিত্যদিনই রাস্তাটি জুড়ে তৈরি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ২৭ নম্বর (পুরাতন) রাস্তার একপাশ পুরোটা জুড়েও চলছে সংস্কার প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্ট কাজের পানি নিষ্কাশনের বড় বড় সিমেন্টের পাইপ, ইট, বালু, মাটিসহ নানা নির্মাণ সামগ্রীই ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার উপরে। রাস্তা খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারও রেখে দেয়া হয়েছে রাস্তার পাশেই। ফলে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। ধানমন্ডি ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার মোড় হয়ে জিগাতলা যাওয়ার রাস্তায়ও প্রায় ৪মাস ধরে চলছে সংস্কার কাজ। প্রথম অবস্থায় পানি নিষ্কাশনের পাইপ বদলানো হলেও এখনো বেহাল অবস্থায় রয়েছে পুরো রাস্তা। এলাকাবাসীর মতে, সম্পূর্ণ কাজ মাসখানিকের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আজও রাস্তা কাটা রয়েছে। কোনো যানবাহন চলাচল করলেই, রাস্তার ওপর ফেলে রাখা বালি-মাটিতে সৃষ্ট ধুলাতে নাক-মুখ বন্ধ করে চলতে হচ্ছে সবাইকে। বনশ্রীতেও চলছে ভাঙা রাস্তার সংস্কার কাজ। প্রচণ্ড ধুলাতে যাওয়া-আসার পথে সেখানেও মানুষকে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। মোটরসাইকেলচালক থেকে পায়ে হাঁটা পথচারী সবাই চলছেন মুখে কাপড় চেপে। এদিকে জনবহুল এলাকা ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ। ধীর গতিতে চলা এই কাজে ফুটপাত জুড়ে ছড়িয়ে রাখা বালি-মাটির জন্য ভুগতে হচ্ছে পথচারীদের। একই সঙ্গে রাস্তার মাঝ বরাবর বিশৃঙ্খলভাবে তৈরিকৃত বাঁশ-টিনের বেড়াতে, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
উন্নয়ন কাজে সৃষ্ট ধুলার কারণে রাজধানীবাসীর এই ভোগান্তীর বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পৃথিবীতে বায়ুদূষণ প্রবণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অন্যতম। আর এই বায়ুদূষণ আগের তুলনায় বর্তমানে অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুষ্ক মৌসুম ও বৃষ্টিপাতহীন সময়ে উন্নয়ন কাজের এই অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্যই রাজধানী জুড়ে অসহনীয় ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানো, নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখাসহ বিভিন্ন নিয়ম-নীতি মানার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে তা কেউই মানছে না। আর এই কারণেই এতো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, সব কাজেরই বার্থ পেইন আছে। এজন্য দেশের উন্নয়নের জন্য কিছুটা কষ্ট দেশবাসীকে সহ্য করতেই হবে। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির সাবেক চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহউদ্দিন বলেন, সংস্কার কাজ চলাকালীন সময়ের জন্য যদি বিকল্প রাস্তার ব্যবহার করা হয়, তাহলে জনদুর্ভোগ অনেকগুণ কমে আসবে। আর উন্নয়ন কাজে সরকারি তথা কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি থাকলে যানজটও কমে আসবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status