জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মির্জা ফখরুলের আহ্বান

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আয়োজনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। তাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন সকাল সাড়ে ছয়টার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকার নিউমার্কেটের বিপরীতে বলাকা সিনেমা হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সকাল আটটার দিকে প্রথমে মিছিল নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদ শফিউর রহমান ও আবুল বরকতের কবর জিয়ারত করেন। এরপর আজিমপুর কবরস্থান থেকে মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় বিএনপি। সেখানে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে আমরা সংকটময় সময় পার করছি। এর থেকে পরিত্রাণের দায়িত্ব শুধু খালেদা জিয়া বা বিএনপির নয়। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে আসতে আমরা এখনই সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সবার প্রতি আমাদের এই আহ্বান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র ও দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলবো এবং জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা সরকারকে সরিয়ে তাদের পরাজিত করবো। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতি বছর এই দিনে আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও দলের চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকি। আজকে এমন এক সময় এ দিবস আমাদের পালন করতে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমস্ত রীতিনীতি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও ক্ষোভের সঙ্গে এবারের ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই দিনে আমরা যখন কথাগুলো বলছি, তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় নির্জন কারাগারে দিনযাপন করছেন। যিনি গণতন্ত্রের জন্য চিরকাল সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। একুশের গুরুত্ব উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, এই দিনে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলভিত্তি। সমগ্র জাতি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলভিত্তি ছিল। তিনি আরো বলেন, আজকে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতি বছর বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা জানালেও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকায় এবার দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে সকালে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে দলটি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাহাদাত হোসেন জীবন, কামরুজ্জামান রতন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রাশেদা বেগম হীরা, মীর সরফত আলী সপু, ওবায়দুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুল বারী ড্যানী, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, নেওয়াজ হালিমা আরলি, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম আলিম, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাবিথ আউয়াল, খন্দকার মারুফ হোসেন, রফিক শিকদার প্রমুখ। অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে মহানগর বিএনপি নেতা মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুবদলের মোমতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, জাসাসের মামুন আহমেদ, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, শাহ নেসারুল হক, ছাত্রদলের মামুনুর রশীদ মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ উপস্থিত ছিলেন।