এক্সক্লুসিভ

দুই ভাষাসৈনিক

এস. আলম তুহিন, মাগুরা থেকে

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মাগুরায় যারা নেতৃত্ব দেন তাদের অধিকাংশই এখন বেঁচে নেই। তবে সে আন্দোলনে সামনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম খান জিয়াউল হক ও আমিনুল ইসলাম চান্দু মিয়ার বন্ধুত্ব এখনো অটুট। এ আন্দোলনে মাগুরায় একসাথে গ্রেপ্তার হন দু’জন। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আড্ডায় সেদিনের স্মৃতিচারণ সহ নানা কষ্টের কথা তুলে ধরেন দুই বন্ধু। মাগুরার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক খান জিয়াউল হক ১৯৫০ সালে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, যেহেতু মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম তাই মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ আমাকে ভাষা আ্‌ন্দোলন থেকে সরে আসতে বলে। বাধ্য হয়ে মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে সাধারণ ছাত্রদেরকে নিয়ে মিছিলে যোগ দিই। মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশের বাধার কারণে একসময় নিজ বাড়ি মাগুরায় চলে আসি। তখনো মাগুরায় তেমন কোন আন্দোলন শুরু হয়নি। আবু মিয়া সংগঠিত করছিলেন সবাইকে। আমি, চান্দু মিয়াও কাজ শুরু করি। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঘটনা জানতে পেরে আমরা মাগুরার সংগঠক নাসিরুল ইসলাম আবু মিয়ার সাথে দেখা করি। সেখান থেকেই ঠিক করা হয় যে, পরদিনই মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। সেদিন সকালেই সবাই সেগুন বাগিচায় একত্রিত হই। সেখানে আবু মিয়ার সভাপতিেত্েব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে আমরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে আসতেই পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্যরা নিরাপদ স্থানে সরে গেলেও আমি, জলিল খান এবং চান্দু মিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়ি। আমাদেরকে পার্শ্ববর্তী জিআরও অফিসে বসিয়ে রাখা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হলে আমরা নোমানী ময়দানে পুনরায় একত্রিত হই।
৯০ বছর বয়সী খান জিয়াউল হকের প্রায় সমবয়সী বন্ধু আমিনুল ইসলাম চান্দুমিয়া সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি তখন বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম খান জিয়াউল হক মাগুরা এলে দু’বন্ধু মিলে আবু মিয়ার কাছে গেলাম। উনি আমাদের পেয়ে খুব খুশি হলেন। ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলি চালানো হলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই মিছিল সমাবেশ করবো। সবাইকে সংগঠিত করা শুরু করি। পরদিন একটি বিশাল মিছিল নোমানী ময়দান থেকে বের হয়। চৌরঙ্গী মোড়ে পৌঁছামাত্র পুলিশ আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাকে, খান জিয়াউল হক ও জলিল খানকে পুলিশ আটকে রাখে। বিকালে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় বাইরে মির্জা শওকত এবং আজিম দেওয়ান বিক্ষোভ করেন।
চান্দু মিয়া বলেন, ফেব্রুয়ারি এলেই সাংবাদিকরা আসেন কথা বলেন ভালোই লাগে। কিন্তু ভাষাসৈনিক হিসেবে আজ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কোনো অনুষ্ঠানে ডাক পেলাম না।
খান জিয়াউল হক বলেন, নতুন প্রজন্ম ভাষাসৈনিকদের গুরুত্ব দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যেমন সমাহিত করা হয় তেমনি ভাষাসৈনিকদেরও করা হোক। আর সঠিক ইতিহাস রক্ষার স্বার্থে ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা করা জরুরি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status