শেষের পাতা

অবকাঠামো সংস্কারে কোটি টাকার চাহিদা

রোহিঙ্গা চাপে বিপর্যস্ত কক্সবাজারের শিক্ষা ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গাদের চাপে বিপর্যয়ের মুখে কক্সবাজার ও বান্দরবানের তিন উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গেল বছর জেএসসি পরীক্ষাসহ সব পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও পাসের হার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে অভ্যন্তরীণ সব পরীক্ষা ও ক্লাসে উপস্থিতির হার। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গার চাপে স্কুলগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলের খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, দরজা, জানালা, টয়লেট ও মেঝের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দৃশ্যমান না হওয়ায় তা নিরূপণ  করা যায়নি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেন। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম ফারুকের নেতৃতে সাত সদস্যের কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেয়। সেই প্রতিবেদনে অবকাঠামো সংস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার চাহিদা দেয়া হয়। অবকাঠামোর পুরোপুুরি সংস্কার করতে কয়েক বছর প্রয়োজন হবে।
এ তিন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি সরজমিন প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের চাহিদাপত্রে বলা হয়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ৫টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সংস্কারের জন্য ৩৫ লাখ, কক্সবাজারের টেকনাফের ১০টি বিদ্যালয়ের টুল, বেঞ্চ, টয়লেট, দরজা, জানালা মেয়ামত করতে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন। আর উখিয়ার ১০টি বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন। তবে প্রত্যেকটি উপজেলায় অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা গেলেও একাডেমিক অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্যমান কোনো পরিমাণ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালা মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের চাহিদায় থোক বরাদ্দ থেকে দেয়া হয়। তারপরও বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে কীভাবে দেয়া যায় তা ঠিক করবো। আর মাউশি’র পরিকল্পনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের চাহিদাপত্রটি শিক্ষা প্রকৌশলকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নাইক্ষ্যংছড়ি পাঁচটি বিদ্যালয়ের ২০১৬ ও ২০১৭ সালের জেএসসি ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ও উপস্থিতির হারে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও কক্সবাজারের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। টেকনাফের আলহাজ আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ও লেদা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেনাবাহিনী তিন মাস অবস্থান করায় একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালের মোট শিক্ষার্থী, জেএসসি পাসের হার ও বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। চাকরি বাদ দিয়ে বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি করছেন এমন ২৪জন শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে। টেকনাফে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টিতে বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। বাকি তিনটিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। উখিয়ার ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও ৭টিতে জেএসসি, বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুয়ায়ী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়, চাকঢালা এসএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, দক্ষিণ ঘুমধুম মিশকাতুল নবী দাখিল মাদ্‌রাসা, চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্‌রাসা, তমরুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোহিঙ্গা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানের ফলে খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র, দরজা, জানালা, টয়লেট ও মেঝের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক বিবেচনায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার আলহাজ আলী আছিয়া উচ্চবিদ্যালয়, শামলাপুর উচ্চবিদ্যালয়, নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়, কান্‌জরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, শাহ্‌পরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমদ উচ্চবিদ্যালয়, সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়, লেদা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হ্নীলা মৌলভীবাজার দারুল কোরআন জমিরিয়া মাদ্‌রাসা, রঙ্গিখালী দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা, রঙ্গিখালী খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) মহিলা মাদ্‌রাসা, কাটাখালী রওজতুন্নবী (সা:) দাখিল মাদ্‌রাসা, দারুত তাওহীদ ইসলামিয়া বালিকা মাদ্‌রাসার অবকাঠামো ও আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উখিয়া উপজেলার উখিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয়, বালুখালী উচ্চবিদ্যালয়, থাইংখালী উচ্চবিদ্যালয়, নুরুল ইসলাম চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়, পালংখালী উচ্চবিদ্যালয়, ফারিরবিল আলিম মাদ্‌রাসা, উখিয়া ডিগ্রি কলেজের আসবাবপত্র ও অবকাঠামোর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একাডেমিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে বলা হয়, জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হারও কমেছে। আগের বছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করলেও ২০১৭ সালের পরীক্ষায় এ স্কুলের পাসের হার ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া আগের বছরের তুলনায় ২৪ দিন ক্লাস কম হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, রাস্তাঘাটে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুলে যায় না। আর দুর্গম এলাকার পাশাপাশি রোহিঙ্গার কারণে শিক্ষক সংকট প্রকট হয়েছে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়া হতো তারা এখন এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status