এক্সক্লুসিভ

সরজমিন সরাইল হাসপাতাল

চিকিৎসক অনুপস্থিত দুর্ভোগে রোগীরা

মোহাম্মদ মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

সকাল ৯টা থেকেই আসছে রোগী। কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করছেন টিকিট। নির্দিষ্ট কক্ষের সামনে দাঁড়িয়েছেন। অপেক্ষা করছেন। চিকিৎসক আসবেন। কিন্তু কারো অপেক্ষার সময় যেন শেষ হচ্ছে না। চিকিৎসকদের কক্ষ খোলা। টেবিল চেয়ার খাঁ খাঁ করছে। নেই শুধু চিকিৎসক। দরজা-জানালা খোলা। হাজিরা খাতায় দেখা যায় মাত্র ২ জন চিকিৎসক স্বাক্ষর করেছেন। বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের কি যে কষ্ট। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই ক্লান্ত। উহ্‌ আহ্‌ করছেন। না পেরে ফ্লোরে বসে পড়ছেন। রোগ সারাতে এসে রোগী হয়ে পড়ছেন। মনের দুঃখে কেউ গালমন্দ করছেন কর্তৃপক্ষকে। জরুরি বিভাগে আহত রোগীদের সেলাই দেওয়ার কাজ করছেন নাইটগার্ড। আবার ৩-৪টি জায়গায় একসঙ্গে ৪-৫ জন দালাল জড়ো হয়ে রোগী বাগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। ২-১ জন রোগীকে টানছেন। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এমনসব অদ্ভুত চিত্রই দেখা যায় সরাইল হাসপাতালে। রোগী দেখতে দেখতে ক্লান্ত ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক ডা. আনাস ইবনে মালেক চিকিৎসক সংকটের কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন। ২ দিনে সরজমিনে ঘুরে ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা এ হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে কাগজে কলমে গতকাল পর্যন্ত আছে ১১ জন। দীর্ঘদিন ৯ জন থাকলেও ৩-৪ দিন আগে ২ জন যোগদান করেছেন। যোগদানের পরই তারা অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির করছেন। অন্যরা মনগড়া মতো হাসপাতালে আসছেন। মন না চাইলে অনেক দিন আসছেনও না। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শনিবার সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেখা যায় মাত্র ২ জন চিকিৎসক উপস্থিত আছেন। ডা. আনাস ইবনে মালেক ও ডা. মোস্তাকিম বিল্লাহ। ২ জনের দ্বারা এত রোগী দেখা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত চাপে হাপাচ্ছেন ২ চিকিৎসক। কষ্ট ও যন্ত্রণায় ছটফট করছে নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীরা। ১২১ ও ১২৭নং কক্ষের সামনে রোগীদের বিশাল লাইন। চিকিৎসকের কক্ষের সব কিছুই গুছানো। নেই শুধু চিকিৎসক। চিকিৎসকই যদি না আসবেন তবে কেন টিকিট দিলেন? এমন সব প্রশ্নও করছেন রোগীরা। কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল ১১টা পর্যন্ত মোট ১১৫টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিঘর গ্রামের মইন উদ্দিনের স্ত্রী সুমাইয়া বেগম (২০), কুট্টাপাড়া গ্রামের জিন্নত আলী (৬৫), বড্ডা পাড়ার আলী আহাম্মদ (৬৫), উচালিয়া পাড়ার ফিরো মিয়া (৮০), আলীনগরের আছমা বেগম (৩০) ও বিমলা বেগম (৫০) ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। ২ ঘণ্টা হলো এখনো চিকিৎসক আসবেনই বলছেন। এ কেমন আচরণ? আর ভালো লাগেছে না। শরীরে সইছে না। এটার নামই সেবা। অপেক্ষা করতে করতে রোগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। অপারগ হয়ে ফ্লোরে বসে গেলাম। বাবা আসলে আজ কি চিকিৎসকের দেখা পাব? দেড়/ দুই শতাধিক রোগীর এমন আকুতিই চোখে পড়ে গত ২ দিন। তবে এ সুযোগে দালালদের দেখা গেছে খোশ মেজাজে। সুন্দর করে খণ্ডখণ্ডভাবে তারা রোগী নিজেদের পছন্দের হাসপাতালে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আনাস ইবনে মালেক চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। শুনেছি কয়েকজন চিকিৎসক ছুটি নিয়েছেন। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে রোগীদের কষ্ট হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status