এক্সক্লুসিভ

কুমিল্লায় ৪৪৪ কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক আন্দোলনে

স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত ১৬ উপজেলার মানুষ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার ১৬ উপজেলার ৪৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপিরা) চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে ঢাকায় আমরণ অনশন কর্মসূচি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে গত ২০শে জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। বাড়ির পাশের ক্লিনিকে সেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ ছুটে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নানা বেসরকারি ক্লিনিকে। ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় লাখ লাখ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৫ সালের ৩০শে মে শনিবার বিকালে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খালেদা জিয়া যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসেন তবে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেবেন, কর্মরত সকলকে চাকরিচ্যুত করবেন। তাই শেখ হাসিনা মায়ের মমতা দিয়ে যাদের চাকরি দিয়েছেন, তাদের চাকরি স্থায়িত্বকরণে অবশ্যই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো জাতীয়করণ করা হবে। এ ঘোষণার আড়াই বছর পার হলেও সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্বকরণ হয়নি। আর ২০১৩ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো.  শাহ নেওয়াজ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সিভিল সার্জনদের জানানো হয়, সরকার সারা দেশের সকল সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের নীতগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। সিএইচসিপিদের অবহিত করতে পত্রটি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লায় ৪৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে। এরপর মানুষকে পর্যাপ্ত সেবা দিতে প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসক নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। শুরু থেকেই ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা মানুষকে পর্যাপ্ত সেবা দিয়ে এলে তাদের চাকরি রাজস্বকরণ হয়নি। প্রকল্পের অধীনে বেতন পরিশোধ করা হলেও এভাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো দেখছে না প্রোভাইডাররা। আবার অনেক সময় বেতনভাতা নিয়মিত দেয়া হয় না। ফলে চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে গত ২০, ২১ ও ২২শে জানুয়ারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ রেখে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনে অবস্থান নেয় সিএইচসিপিরা। ২৩ ও ২৪ তারিখেও একই কর্মসূচি পালন করে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে। ২৭-৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা জেলার সিএইচসিপিরা ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাজস্বকরণের কোনো  ঘোষণা না আসায় পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই মাঝে আলোচিত একটি রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটি দুইদিন কর্মসূচি স্থগিত করে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করে। বর্তমানে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে মহাখালীর বিএমআরসি ভবনের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে। ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন কুমিল্লার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা। ফলে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের শত শত রোগী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন উপজেলার নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজন জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছি না। আমরা টাকা খরচ করে দূর শহরে গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী হেলাল উদ্দিন জানান, সরকার জনগণের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ১৩৮৬১ জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়। চাকরির ছয় বছর অতিবাহিত হলেও রাজস্বকরণ করেনি। তাই বিভিন্ন কর্মসূচি শেষে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের চাকরি রাজস্বকরণের ঘোষণা না দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status