প্রথম পাতা
বিদেশ যাওয়ার লোভ
প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁসলেন নারায়ণগঞ্জের তিন যুবক
বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের জোট দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘প্যারাডাইস পেপারস’ কেলেঙ্কারির সাম্প্রতিক তথ্যে উঠে আসে নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ীর নাম। কারা এই তিন ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি এ নিয়ে শহরের সর্বত্র চলছে আলোচনা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য-উপাত্ত। তিন ব্যবসায়ীর মধ্যে তাজুল ইসলাম তাজুল ও তুহিন ইসলাম সুমন আপন দুই ভাই। বর্তমানে তুহিন ইসলাম বেকার আর তাজুল ইসলাম তার বন্ধুর সঙ্গে একটি কোচিং সেন্টার চালান। আর ফারুক পাহলোয়ান আদম ব্যবসায়ী ছাড়াও একাধিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনিই মূলত ২০০৯ সালে মাল্টাতে কোম্পানি খুলেন এবং বিদেশে নেয়ার অজুহাতে ওই কোম্পানিতে তাজুল ইসলাম ও তুহিন ইসলামকে সম্পৃক্ত করেন। ফারুক পালোয়ান তার বায়ারের মাধ্যমে এই কোম্পানি ওপেন করেন। কিন্তু তার দাবি, কোম্পানি খোলা হলেও চাহিদামতো টাকা যোগাড় করতে না পারায় তিনি আর মাল্টায় যেতে পারেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠস্থ ৩০নং জুয়েল সাহেবের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তাজুল ইসলাম, তুহিন ইসলাম ও তাদের বড় দুই ভাই রিপন ও শিপন। বাবার নাম মৃত রফিকুল ইসলাম। সংসারের কর্তা হচ্ছেন সবার বড় ভাই রিপন। রিপন জানান, ঘটনাটি ২০০৯ সালের। আমার বেকার দুই ছোট ভাইকে বিদেশ পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছিলাম। একদিন আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে কথা হয় ফতুল্লা খানপুরের আজমিরিবাগ এলাকার ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে। ফারুক মাল্টায় লোক পাঠান। তখন রিপন ইসলাম তার দুই ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। তখনই ৪ লাখ টাকা ক্যাশ দেয়া হয়। টাকা নেয়ার কিছুদিন পর ফারুক প্রস্তাব দেন যে, সে মাল্টাতে গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন এবং সেই কোম্পানিতে তুহিন ইসলাম ও তাজুল ইসলামকে ৩৩% শেয়ার হোল্ডার করবেন। রিপন ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। রিপন মনে করেন, মাল্টা যেতে পারলে পরবর্তীকালে ইতালি কিংবা অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন। তাই তিনি ফারুক পালোয়ানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কথা ছিল মাল্টাতে যেতে পারলে তাজুল ইসলাম ও তুহিন ইসলাম কাগজে স্বাক্ষর করে দেবে এবং পুরো কোম্পানির মালিক এককভাবে ফারুক পালোয়ান হবেন।
সে অনুযায়ী তুহিন ইসলাম ও তাজুল ইসলাম মাল্টা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন। পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজ তৈরি করতে থাকেন। এসময় তারা দুই ভাই আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স, আয়কর লাইসেন্স, চেম্বার অব কমার্স লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে রাখেন, যাতে মাল্টা গিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন ট্রেড নামে একটি ভুয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরও ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেন। সব প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন কেবল ভিসাটা বাকি। তখন ফারুক পালোয়ান তুহিন ইসলামকে ভারতে নিয়ে যান। এবং বলেন, এখান থেকে প্রথমে টুরিস্ট ভিসা করবেন। তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন তিনি দেশ-বিদেশে ব্যবসায়িক কাজে ঘুরে বেড়ান। ইতালি অ্যাম্বাসিতে তুহিন ইসলাম ও ফারুক পালোয়ান সব কাগজপত্র জমা দেন। ইন্টারভিউতে দুজনের ব্যবসা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, টি-শার্ট, পলো শার্ট এসব তৈরি করেন। তারপর অ্যাম্বাসিতে তাদের কাগজপত্র রাখা হলো। কিন্তু বিধিবাম, কিছুদিন পর ইতালি অ্যাম্বাসি থেকে জানানো হলো যে, তাদের ভিসা হবে না। ঢাকায় ফিরে অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। যখন একেবারেই ভিসা পাওয়া সম্ভব নয় তখন বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটি ক্লোজ করে দেয়ার সিন্ধান্ত নেন। এরপর থেকে মাল্টায় ফারুক পালোয়ানের কোম্পানির সঙ্গে তাজুল ইসলাম ও তুহিন ইসলামের আর কোনো সম্পর্ক নেই।
একপর্যায়ে রিপন ফারুক পালোয়ানকে বলেন, যে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল তা ফেরত দিতে। কিন্তু ফারুক আজ দেবো, কাল দেবো করে দশ হাজার, বিশ হাজার করে এই পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি আছে আরো দেড় লাখ টাকা। সেই টাকার জন্য এখনও ফারুক পালোয়ানের পেছনে ঘুরছেন রিপন।
এদিকে ঘটনার ৯ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেই ৯ বছর আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের নিউজ পেপার ও টেলিভশনের প্রচারিত খবর রিপন ও তার পরিবারকে হতবাক করে দিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। রিপন এই কোম্পানির ব্যাপারে বলেন, যখন ভিসা হলো না তখন ফারুক পালোয়ানকে কোম্পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ওই কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রিপন বা তার পরিবারের কেউ আর কোনো ইন্টারেস্ট দেখালো না। হঠাৎ ১৫ই ফেব্রুয়ারি যখন টিভিতে দেখলো তারপর রিপোর্টারেরা তার বাসায় এলো। তখন তিনি কথা বলেন ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে। শুক্রবার তিনি সদর থানায় জিডি করতে যান। কিন্তু ওসি না থাকতে তিনি জিডি করতে পারেননি। বর্তমানে তাজুল ইসলাম তার বন্ধুর সঙ্গে শহরের কলেজ রোডে একটি কোচিং সেন্টার চালান আর তুহিন ইসলাম ভাইয়ের সংসারে আছেন। বতর্মানে বেকার।
এদিকে ফারুক পালোয়ান জানান, তিনি আগে সাইপ্রাস ছিলেন। তিনি যাকে মাল দিতেন সেই বায়ারের সাইপ্রাস ও মাল্টায় শোরুম আছে। ওই বায়ার তাকে বলেছে তোমাকে একটা এলসি ওপেন করে দেই তুমি আমাকে নিয়মিত মাল দিও। সে নিজেই গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেড নামে আমাকে একটা কোম্পানি খুলে দেয়। খরচটা সে নিজেই দিয়েছিল। হয়তো আমরা মাল পাঠালে লাভের অংশ থেকে খরচটা কেটে রাখতো। কিন্তু ব্যবসা করলে তো ব্যাংকে প্রচুর টাকা ট্রানজেশন থাকতে হবে। তখন আমাদের তিনজনের ১২ হাজার করে ৩৬ হাজার ইউরো (৩৬ লাখ টাকা) দেখানোর প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পারিনি। ফলে অ্যাম্বাসি বলে ব্যবসা করো অথচ টাকা নেই। ভিসা আর হয়নি। তাই আর যেতে পারিনি। এবং কোম্পানির খোঁজও রাখিনি। ওই দেশেও আমাদের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই, বাংলাদেশেও নেই। এলসি করি আর টিটি করি আমাদের তো অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। অ্যাকাউন্টই করিনি। আর কোম্পানি রিনিউ করিনি। এভাবেই পড়ে আছে। শেষ পর্যন্ত ওরাও (তাজুল ও তুহিন) যেতে পারেনি আমিও যেতে পারিনি। তবে পরে আবার যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো টাকা যোগাড় হলে।
এক প্রশ্নের জাবাবে ফারুক পালোয়ান বলেন, আমরা যেই আইনজীবীর মাধ্যমে কাজটা করেছি তিনি মাল্টার বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী। তার নাম মেলকম নিডসু। ওর কোম্পানি হল ভেনাস ওভারসিজ। আমার বায়ার এই আইনজীবীর মাধ্যমে আমাদের কোম্পানিটা খুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয় মুসা বিন সমশেরসহ ২২ জনের কোম্পানি এই আইনজীবীর মাধ্যমে ওপেন হয়েছে। ফলে মুসা বিন সমশেরের সঙ্গে আমাদের কোম্পানির নামও চলে এসেছে। মোট কথা, আমরা যেই ল’ইয়ার দিয়ে কোম্পানি খুলেছি, মুসা বিন সমশেরও সেই ল’ইয়ার দিয়ে কোম্পানি খুলেছেন।
উল্লেখ্য, কর ফাঁকি দিতে দেশের বাইরে বিভিন্ন অফসোর কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করার নতুন আরেকটি গোপন নথি ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের জোট দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। প্যারাডাইস পেপার্স খ্যাত ওই গোপন নথিতে নতুন করে নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ীসহ আরো ২০ বাংলাদেশির নাম উঠে আসে। বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় বাংলাদেশের মুসা বিন শমসেরসহ নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম তাজুন, তুহিন ইসলাম সুমন, ফারুক পালোয়নের নাম উঠে আসে। বুধবার ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়, কর ফাঁকি দিতে এসব ব্যক্তি মাল্টায় কোম্পানি খুলেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ী গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেডের সঙ্গে সংশিষ্ট । এই কোম্পানি নিবন্ধিত হয় ২০০৯ সালে। গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেডে চারটি দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাজুল ইসলাম তাজুন ও তুহিন ইসলাম সুমন। এ কোম্পানিতে তারা শেয়ারহোল্ডার, জুডিশিয়াল রিপ্রেজেন্টেটিভ, লিগ্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও পরিচালক। দুজনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ৩১ বালুর মাঠ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।
অপর ব্যবসায়ী ফারুক পালোয়ানও একই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এখানে তিনি শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক, জুডিশিয়াল রিপ্রেজেন্টেটিভ, লিগ্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তার ঠিকানা আজমিরিবাগ খানপুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠস্থ ৩০নং জুয়েল সাহেবের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তাজুল ইসলাম, তুহিন ইসলাম ও তাদের বড় দুই ভাই রিপন ও শিপন। বাবার নাম মৃত রফিকুল ইসলাম। সংসারের কর্তা হচ্ছেন সবার বড় ভাই রিপন। রিপন জানান, ঘটনাটি ২০০৯ সালের। আমার বেকার দুই ছোট ভাইকে বিদেশ পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছিলাম। একদিন আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে কথা হয় ফতুল্লা খানপুরের আজমিরিবাগ এলাকার ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে। ফারুক মাল্টায় লোক পাঠান। তখন রিপন ইসলাম তার দুই ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। তখনই ৪ লাখ টাকা ক্যাশ দেয়া হয়। টাকা নেয়ার কিছুদিন পর ফারুক প্রস্তাব দেন যে, সে মাল্টাতে গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন এবং সেই কোম্পানিতে তুহিন ইসলাম ও তাজুল ইসলামকে ৩৩% শেয়ার হোল্ডার করবেন। রিপন ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। রিপন মনে করেন, মাল্টা যেতে পারলে পরবর্তীকালে ইতালি কিংবা অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন। তাই তিনি ফারুক পালোয়ানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কথা ছিল মাল্টাতে যেতে পারলে তাজুল ইসলাম ও তুহিন ইসলাম কাগজে স্বাক্ষর করে দেবে এবং পুরো কোম্পানির মালিক এককভাবে ফারুক পালোয়ান হবেন।
সে অনুযায়ী তুহিন ইসলাম ও তাজুল ইসলাম মাল্টা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন। পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজ তৈরি করতে থাকেন। এসময় তারা দুই ভাই আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স, আয়কর লাইসেন্স, চেম্বার অব কমার্স লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে রাখেন, যাতে মাল্টা গিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন ট্রেড নামে একটি ভুয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরও ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেন। সব প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন কেবল ভিসাটা বাকি। তখন ফারুক পালোয়ান তুহিন ইসলামকে ভারতে নিয়ে যান। এবং বলেন, এখান থেকে প্রথমে টুরিস্ট ভিসা করবেন। তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন তিনি দেশ-বিদেশে ব্যবসায়িক কাজে ঘুরে বেড়ান। ইতালি অ্যাম্বাসিতে তুহিন ইসলাম ও ফারুক পালোয়ান সব কাগজপত্র জমা দেন। ইন্টারভিউতে দুজনের ব্যবসা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, টি-শার্ট, পলো শার্ট এসব তৈরি করেন। তারপর অ্যাম্বাসিতে তাদের কাগজপত্র রাখা হলো। কিন্তু বিধিবাম, কিছুদিন পর ইতালি অ্যাম্বাসি থেকে জানানো হলো যে, তাদের ভিসা হবে না। ঢাকায় ফিরে অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। যখন একেবারেই ভিসা পাওয়া সম্ভব নয় তখন বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটি ক্লোজ করে দেয়ার সিন্ধান্ত নেন। এরপর থেকে মাল্টায় ফারুক পালোয়ানের কোম্পানির সঙ্গে তাজুল ইসলাম ও তুহিন ইসলামের আর কোনো সম্পর্ক নেই।
একপর্যায়ে রিপন ফারুক পালোয়ানকে বলেন, যে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল তা ফেরত দিতে। কিন্তু ফারুক আজ দেবো, কাল দেবো করে দশ হাজার, বিশ হাজার করে এই পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি আছে আরো দেড় লাখ টাকা। সেই টাকার জন্য এখনও ফারুক পালোয়ানের পেছনে ঘুরছেন রিপন।
এদিকে ঘটনার ৯ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেই ৯ বছর আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের নিউজ পেপার ও টেলিভশনের প্রচারিত খবর রিপন ও তার পরিবারকে হতবাক করে দিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। রিপন এই কোম্পানির ব্যাপারে বলেন, যখন ভিসা হলো না তখন ফারুক পালোয়ানকে কোম্পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ওই কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রিপন বা তার পরিবারের কেউ আর কোনো ইন্টারেস্ট দেখালো না। হঠাৎ ১৫ই ফেব্রুয়ারি যখন টিভিতে দেখলো তারপর রিপোর্টারেরা তার বাসায় এলো। তখন তিনি কথা বলেন ফারুক পালোয়ানের সঙ্গে। শুক্রবার তিনি সদর থানায় জিডি করতে যান। কিন্তু ওসি না থাকতে তিনি জিডি করতে পারেননি। বর্তমানে তাজুল ইসলাম তার বন্ধুর সঙ্গে শহরের কলেজ রোডে একটি কোচিং সেন্টার চালান আর তুহিন ইসলাম ভাইয়ের সংসারে আছেন। বতর্মানে বেকার।
এদিকে ফারুক পালোয়ান জানান, তিনি আগে সাইপ্রাস ছিলেন। তিনি যাকে মাল দিতেন সেই বায়ারের সাইপ্রাস ও মাল্টায় শোরুম আছে। ওই বায়ার তাকে বলেছে তোমাকে একটা এলসি ওপেন করে দেই তুমি আমাকে নিয়মিত মাল দিও। সে নিজেই গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেড নামে আমাকে একটা কোম্পানি খুলে দেয়। খরচটা সে নিজেই দিয়েছিল। হয়তো আমরা মাল পাঠালে লাভের অংশ থেকে খরচটা কেটে রাখতো। কিন্তু ব্যবসা করলে তো ব্যাংকে প্রচুর টাকা ট্রানজেশন থাকতে হবে। তখন আমাদের তিনজনের ১২ হাজার করে ৩৬ হাজার ইউরো (৩৬ লাখ টাকা) দেখানোর প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পারিনি। ফলে অ্যাম্বাসি বলে ব্যবসা করো অথচ টাকা নেই। ভিসা আর হয়নি। তাই আর যেতে পারিনি। এবং কোম্পানির খোঁজও রাখিনি। ওই দেশেও আমাদের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই, বাংলাদেশেও নেই। এলসি করি আর টিটি করি আমাদের তো অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। অ্যাকাউন্টই করিনি। আর কোম্পানি রিনিউ করিনি। এভাবেই পড়ে আছে। শেষ পর্যন্ত ওরাও (তাজুল ও তুহিন) যেতে পারেনি আমিও যেতে পারিনি। তবে পরে আবার যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো টাকা যোগাড় হলে।
এক প্রশ্নের জাবাবে ফারুক পালোয়ান বলেন, আমরা যেই আইনজীবীর মাধ্যমে কাজটা করেছি তিনি মাল্টার বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী। তার নাম মেলকম নিডসু। ওর কোম্পানি হল ভেনাস ওভারসিজ। আমার বায়ার এই আইনজীবীর মাধ্যমে আমাদের কোম্পানিটা খুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয় মুসা বিন সমশেরসহ ২২ জনের কোম্পানি এই আইনজীবীর মাধ্যমে ওপেন হয়েছে। ফলে মুসা বিন সমশেরের সঙ্গে আমাদের কোম্পানির নামও চলে এসেছে। মোট কথা, আমরা যেই ল’ইয়ার দিয়ে কোম্পানি খুলেছি, মুসা বিন সমশেরও সেই ল’ইয়ার দিয়ে কোম্পানি খুলেছেন।
উল্লেখ্য, কর ফাঁকি দিতে দেশের বাইরে বিভিন্ন অফসোর কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করার নতুন আরেকটি গোপন নথি ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের জোট দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। প্যারাডাইস পেপার্স খ্যাত ওই গোপন নথিতে নতুন করে নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ীসহ আরো ২০ বাংলাদেশির নাম উঠে আসে। বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় বাংলাদেশের মুসা বিন শমসেরসহ নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম তাজুন, তুহিন ইসলাম সুমন, ফারুক পালোয়নের নাম উঠে আসে। বুধবার ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়, কর ফাঁকি দিতে এসব ব্যক্তি মাল্টায় কোম্পানি খুলেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের তিন ব্যবসায়ী গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেডের সঙ্গে সংশিষ্ট । এই কোম্পানি নিবন্ধিত হয় ২০০৯ সালে। গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেডে চারটি দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাজুল ইসলাম তাজুন ও তুহিন ইসলাম সুমন। এ কোম্পানিতে তারা শেয়ারহোল্ডার, জুডিশিয়াল রিপ্রেজেন্টেটিভ, লিগ্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও পরিচালক। দুজনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ৩১ বালুর মাঠ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।
অপর ব্যবসায়ী ফারুক পালোয়ানও একই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এখানে তিনি শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক, জুডিশিয়াল রিপ্রেজেন্টেটিভ, লিগ্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তার ঠিকানা আজমিরিবাগ খানপুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।