প্রথম পাতা

সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে সরকার

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপির গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ব্যাহত করতে সরকার উস্কানি দিচ্ছে অভিযোগ করে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি সারা দেশের নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাবো, আপনারা শান্তভাবে ধৈর্য ধরে সব কিছু মোকাবিলা করুন। কখনো ধৈর্যহারা হবেন না, বিশৃঙ্খলা করবেন না। আমাদের প্রাণের প্রিয় নেত্রী 
খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছি, সে আন্দোলন যাতে ব্যাঘাতপ্রাপ্ত না হয়, আপনারা সবাই সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সফল করবেন। সরকারের যে উস্কানি, যে নীলনকশা তাকে ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের বিজয় নিশ্চিত করুন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কারামুক্তির দাবিতে গতকাল সকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে আমরা উপস্থিত হয়েছি। আজকে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে কিনা, সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা, গণতন্ত্র থাকবে কিনা, আমরা কেউ স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকতে পারবো কিনা, সেখানেই আজকে প্রশ্ন হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জনগণকে বলতে চাই- আর বসে থাকার সময় নেই। সমস্ত চেতনাকে জাগ্রত করুন, সবাই উঠে আসুন, বেরিয়ে আসুন। প্রতিবাদে সোচ্চার হোন এবং রাজপথে প্রতিবাদ করুন। এ সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চলবে। মির্জা আলমগীর বলেন, যেখানে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি তার কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে এই মিথ্যা মামলা দিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার নাম দিয়ে এটাকে (শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি) তারা (সরকার) সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত করতে চায়। তিনি বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকার একেবারে জনগণের ওপর চড়াও হয়ে তাদের সমস্ত অধিকারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। এভাবে টিকে থাকা কোনোদিনই সম্ভব হবে না। ইতিহাস তা বলে না। জনগণের উত্তাল প্রতিবাদের মুখে এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। সারা দেশে গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, সারা দেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমাদের নেতানেত্রীরা গ্রেপ্তার হননি। আজকেও (শনিবার) সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিন পুলিশ রেইড দিচ্ছে, গ্রেপ্তার ও শত শত মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে শুধু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। দেশের জনগণকে আজকে একটি বিশাল কারাগারে বন্দি করা হয়েছে, গণতন্ত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশনেত্রীর মুক্তি এদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, এদেশের জনগণের মুক্তি। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে পাঠানোর পরে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এই গণস্বাক্ষর অভিযানে আমরা কোটি কোটি মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রমাণ করতে চাই, খালেদা জিয়া এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী। আজকে সারা দেশের মানুষ তার মুক্তির দাবি করছে। খালেদা জিয়া এখন জাতীয় নেত্রীই শুধু নন, তিনি আন্তর্জাতিক নেত্রী হয়েছেন। সরকারকে উদ্দেশ্য করে ড. মোশাররফ বলেন, আপনারা খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু এদেশের জনগণ আপনাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। কারণ, যারা অতীতে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল তারা দেশেই থাকতে পারেনি। ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আর আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে নির্বাচনের চিন্তা করছি না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপি নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিশ্বময় এটি একটি উত্তম গণতান্ত্রিক পন্থা। একটি দাবি আদায় করার জন্য জনগণের স্বাক্ষর গ্রহণ করা। এর চেয়ে ভালো শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর কর্মসূচি আর হতে পারে না। জাতীয়তাবাদী দল শান্তিতে বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এবার আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো। এই গণতান্ত্রিক অধিকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব। আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি। প্রবীণ এ নেতা বলেন, বাংলাদেশব্যাপী এই স্বাক্ষর অভিযান চলবে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করে আনবো। বাংলাদেশে অধিকার ফিরিয়ে আনবো। জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবো। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করা হলে আমরা এই দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করবো। বাংলাদেশের মানুষ আবার শান্তিতে থাকতে পারবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির অক্ষমতার কারণে নাকি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে- এমন বক্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি স্বীকার করেছেন বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। আপনারা অত্যাচার করে ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। অশান্তি করতে চাইলে আপনারা করতে পারেন। মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। উল্টাপাল্টা কথা বলে, উস্কানি দিয়ে ছেলেপেলেদের ক্ষেপাবেন না। অনুরোধ থাকলো, বিএনপি শান্তিপূর্ণ দল, শান্তিপূর্ণই থাকবে। অশান্তি তৈরি করলে যেকোনো অশান্তির জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে গণস্বাক্ষর ফরমে নিজে সই করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মির্জা আলমগীর। ঢাকাসহ সারা দেশে এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়েছে একযোগে। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বক্তব্য দেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, বেবী নাজনীন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, রিয়াজউদ্দিন নসু, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক, ওমর ফারুক মুন্না, ফয়সল আহমেদ সজল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপি মহাসচিব যখন কার্যালয়ের নিচতলার ছোট একটি কক্ষে নেতাকর্মীর সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন কার্যালয়ের একপাশে শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। তিনদিনের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও আগামীকাল ঢাকা মহানগর ব্যতিরেকে মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status