দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারই: অলি

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেছেন, সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত, প্রতিশোধপরায়ণতা ও প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, আইনলঙ্ঘন করে, সংবিধান না মেনে নির্জন-পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি করার কারণে সরকারেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার মনে করেছিল, এ কাজের মাধ্যমে তারা বাহবা পাবে। কিন্তু তিনি মনে করেন, গত ৯ বছরে এ সিদ্ধান্ত হলো সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল, যা তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর: গণতন্ত্রের সংকট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে এক টাকাও দুর্নীতি হয়নি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কেউ এক টাকাও মেরে খাননি। পুরো টাকাই ব্যাংকে আছে। দুই কোটি টাকা এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। কিছু পদ্ধতিগত ভুল ছিল। অভিজ্ঞতার অভাব ও না জানার কারণেই এ পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে। পদ্ধতিগত ভুলের জন্য তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হতে পারে না। জনগণ এ সাজা মেনে নেয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারের বিরোধীদলীয় নেত্রী, জনগণের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ৭৫ বছর বয়সের এ নেত্রী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। দেশের মানুষ মনে করে, তার নামে মিথ্যা মামলা ও তথ্য দিয়ে অবিচার করা হয়েছে। মানসিকভাবে নির্যাতন করার জন্য পরিত্যক্ত, নির্জন কারাগারে জেল দেয়া হয়েছে। তার জন্য দেশের মানুষ নীরবে কাঁদছে। সরকার জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেছে। তারা খালেদা জিয়াকে বন্দি করে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে আবারো ক্ষমতা দখল করতে চায় সেটা জনগণ বুঝে গেছে। অলি আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। এই মিথ্যা মামলা থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মুক্ত করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন নিশ্চিত করতে হবে। এতে জনগণ তাদের জানমাল এবং সামাজিক নিরাপত্তা পাবে। দেশের বিভেদ-কলহ, হানাহানি, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ হবে। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকার কিছুই করছে না। অথচ পদ্ধতিগত ভুলের জন্য দেশের সবচেয়ে জননন্দিত নেত্রীকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এলডিপি সভাপতি বলেন, আগামী এক বছর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটপূর্ণ সময়। কারণ সরকারের ভুল রাজনীতির কারণে ও সর্বত্র দলীয়করণের ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ। অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও সাধারণ গরিব মানুষ অসহায় জীবন-যাপন করছেন। দেশে এখন প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম, নির্যাতন আর দুর্নীতি হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পাশাপাশি ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে। হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন লুটপাট-কেলেঙ্কারির শিকার মানুষ। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার দলীয়করণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সুশাসন সুদূরপরাহত। এসব কারণে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই, সরকার জনবিচ্ছিন্ন। এখন জনগণ সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নামার অপেক্ষায়। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আবার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে জিয়ার হাত ধরে। ফলে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে দেশকে গণতন্ত্রহীন করতে চায় সরকার। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, জাতি একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার আজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বন্দির মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে নতুন করে হত্যা করা হলো। বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের মতো আবার ক্ষমতা দখল করতে চায়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় দিয়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দেশ এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিনাভোটের সরকারের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ।
সেমিনারে বিএফইউজের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদউদ্দিন আহমেদ, ছাত্রনেতা নাজমুল হাসান, সাইদুর রহমান তামান্না ও মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status