বাংলারজমিন
ফতেহপুর-শাহবাজপুর সড়ক
নিজেরাই নিলেন কষ্ট গোছানোর উদ্যোগ
আবদুর রহমান সোহেল, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৭:৫১ পূর্বাহ্ন
মাত্র চার কিলোমিটার সড়কের জন্য দুর্ভোগে ছিলেন রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর, মুনিয়ারপাড়সহ চার গ্রামের মানুষ। বর্ষায় ৭ মাসই পানিতে ডুবে থাকা আর কাঁদাই ছিল যার নিত্যসঙ্গী। সড়কটিতে মাটি কাটা আর পাকা করার জন্য ঘুরেছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। সবাই আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। অবশেষে নিজেদের কষ্ট নিজেরাই ঘোছানোর উদ্যোগ নিলেন। নিজেদের পকেটের টাকায় করে নিলেন সড়কে মাটি ফেলে উঁচু ও চওড়া করার কাজ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের তিনটি গ্রাম ফতেহপুর, মুনিয়ারপার শাহবাজপুর। শাহবাজপুর গ্রামটি প্রায় কাউয়াদীঘি হাওরের মাঝামাঝিই পড়েছে। বোরো মৌসুমে এ সড়ক দিয়েই হাওরের হাজার হাজার মন ধান নিয়ে আসেন আশেপাশের কৃষকরা। বর্ষায় পুরো ৭ মাসই গ্রামগুলোর মানুষের চলাচলের একমাত্র এ সড়কটি থাকে পানির নিচে। মাটি দিয়ে উঁচু করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এলাকাকার মানুষজন। দিয়েছেন সংবর্ধনাও। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া নেতাদের কাছ থেকে কিছুই পাননি তারা। অবশেষে নিজেদের উদ্যোগেই মাটি কিনে সড়ক উচু করলেন এলাকার লোকজন। সড়কটিতে মাটি ভরাট কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ৭ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি, ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সড়ক সংস্কার বাস্থবায়ন কমিটি ও ৩ জনকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। ফতেহপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, এ সড়কটি প্রায় চার কিলোমিটার। বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে থাকে সড়কটি। ওই সময় নৌকায় করেই যাতায়ত করতে হয় এলাকার আড়াই হাজার মানুষের। এসব গ্রামে প্রাইমারি স্কুল থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অকালেই ঝড়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের কাদা-পানি মাড়িয়ে দূরের বিদ্যালয়ে দিতে চান না অনেক অভিভাবকই। এ সড়কটিতে মাটি কাটার প্রয়োজন ছিল। মুনিয়ারপার গ্রামের আব্দুল হাকিম রাজ বলেন, সড়কটির কারণে দুর্ভোগে ছিলেন তিন ওয়ার্ডের মানুষ। মৃত্যুপথযাত্রীরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন। সড়কটি সংস্কারের জন্য ৮ লাখ টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়। আমরা এলাকাবাসী এ তিন গ্রামের ইংল্যান্ড, সৌদিআরব, দুবাই, ব্রাজিল, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে থাকা প্রাবাসীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসআপে একটি গ্রুপ খোলা হয়। ওই গ্রুপের মাধ্যমেই আমরা ৫ লাখটাকার মতো বাজেট সংগ্রহ করেছি। বাকি টাকাও ইনশাআল্লাহ জোগাড় হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এ সড়কে কাজ করার জন্য এমপি-চেয়ারম্যান অনেকের কাছেই যাওয়া হয়েছে। সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সবাই আশ্বাস দিয়েছেন কোন কাজ হয়নি। এলাকাবাসীর মধ্যে এনিয়ে ক্ষোভ ছিল। ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে যে মাটি কাটার কাজ করা হচ্ছে এজন্য আমি তাদের আমার নিজ ও ইউনিয়নসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। এলজিইডিতে এ সড়কের কোড করা আছে। এটি পাকা করার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।