প্রথম পাতা

রায়ের কপির বেড়াজালে খালেদার জামিন আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার ৯ দিন পরেও রায়ের সার্টিফায়েড কপি (প্রত্যায়িত অনুলিপি) পাননি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণার পর পরই তারা আপিল ও জামিনের আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। কিন্তু রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায় পরবর্তী প্রক্রিয়ায় এগুতে পারছেন না। খালেদার আইনজীবীরা বলছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আপিল করবেন এবং খালেদার জামিন চাইবেন। সে প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। এদিকে খালেদার আইনজীবী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ গতকাল অভিযোগ করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখতে রায়ের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরি করছে। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আদালত থেকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেয়া হচ্ছে না বলে বিএনপি’র আইনজীবীরা যে অভিযোগ করছেন, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। রায়ের সার্টিফায়েড কপি টাইপ হওয়া শেষ হলে রায়ের কপি দিতে ১ মিনিটও দেরি করা হবে না। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার জামিন ও রায়ের অনুলিপি দেয়া নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। গতকাল আইনজীবীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে এ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও পাঁচ জনের প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলেও খালেদা জিয়ার সামাজিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ের পরই খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত কারাবন্দি হিসেবে রয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য মৌখিক আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে ১১ই ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে রায়ের কপির জন্য লিখিত অবেদন করেন তারা। এ মামলার ৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের জন্য ১২ই ফেব্রুয়ারি তিন হাজার ফলিও কপি আদালতে দাখিল করেন খালেদার আইনজীবীরা।
গেল সপ্তাহে প্রতিটি কর্মদিবসে রায়ের অনুলিপির জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াসহ অন্য আইনজীবীরা। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে সানাউল্লাহ মিয়া বলেছিলেন, ওইদিন বিকাল ৪টায় রায়ের অনুলিপি পাবেন তারা। আদালত থেকে তাদের সে রকম আশ্বাসই দেয়া হয়েছে। পরে ওইদিন খালেদার আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের পঞ্চম তলায় সংশ্লিষ্ট আদালতে যোগাযোগ করলে বিকাল সাড়ে পাঁচটার কিছু পরে আদালত থেকে জানানো হয়, মূল রায়ের সঙ্গে রায়ের নকল মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। সেজন্য রায়ের অনুলিপি পুরো প্রস্তুত হয়নি । তাই, বৃহস্পতিবার রায়ের অনুলিপি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আদালত থেকে পেশকারের (বেঞ্চ সহকারী) মাধ্যমে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, মূল রায়ের সঙ্গে রায়ের নকল মেলানো হচ্ছে। অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অর্ধেক কাজ শেষ না করে রায়ের সার্টিফায়েড কপি আমাদেরকে দিতে পারছেন না। তিনি জানান, রোববার অথবা সোমবার রায়ের কপি তাদেরকে দেয়া হবে বলে আদালত থেকে জানানো হয়েছে। সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল মানবজমিনকে বলেন, রায়ের নকল না পাওয়ায় আমরা খালেদা জিয়ার আপিল এবং জামিনের আবেদনের বিষয়ে কিছু করতে পারছি না। আমরা আশা করছি রোববার অথবা সোমবার রায়ের কপি আমরা পাব। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের আপিলের প্রস্তুতি পুরোদমেই রয়েছে। রায়ের কপি পেলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপিল করবো আমরা।
রায়ের কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরি করছে: মওদুদ
খালেদা জিয়ার রায়ের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই সরকার এই ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, রায় হয়েছে ৮ই ফেব্রুয়ারি। রোববার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃস্পতিবার গেল- এখন পর্যন্ত রায়ের কপি পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এই যে ছলচাতুরি, এটা করার অর্থই হলো যে যতদিন পারা যায়, জেলখানায় একটা দিন যদি বেশি রাখা যায় বেগম জিয়াকে। এটি ?বুমেরাং হচ্ছে উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে।
মওদুদ আহমদ আরো বলেন, যখনই রায়ের নকল পাব, আমরা আপিল ফাইল করব। আপিলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা তার জামিন চাইব। আমরা বিশ্বাস করি, পাঁচ বছরের (সাজার মেয়াদ) জন্য জামিন এমনিতেই কোর্ট লিবারেলি দেখে। খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে এটিকে সংবিধান ও কারাবিধির পরিপন্থি বলে দাবি করেন মওদুদ। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার পথ দূরে ঠেলে দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন আমাদের দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হলো- বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা, আরেকটি হলো- আন্দোলন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, দমন-পীড়ন করে সরকার যদি মনে করে যে, দেশের জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি দুর্বল হয়ে গেছে, এটা তারা মারাত্মক ভুল করবেন। তারা (সরকার) দেশের মানুষের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে না।

খালেদা জিয়াকে আর কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে না:আইনমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাহ্মণবাড়িয়া/কসবা ও আখাউড়া প্রতিনিধি: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়নি, আর কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আরো বলেন- আদালত থেকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেয়া হচ্ছে না বলে বিএনপির আইনজীবীরা যে অভিযোগ করছেন সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কপি দেয়া না দেয়ার সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। রায়ের সার্টিফায়েড কপি টাইপ হওয়া শেষ হলে সার্টিফায়েড কপি দিতে ১ মিনিটও দেরি করা হবে না। আইনমন্ত্রী গতকাল তার নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। গতকাল দুপুরে কসবায় এতিম শিশুদের মাঝে কম্বল বিতরণ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি গতকাল (বৃহম্পতিবার) শুনেছি যে রায়ের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে এজলাসে তারা (খালেদার আইনজীবীরা) জোর করার মতো অবস্থা তৈরি করেছেন। উনারা কোনো আইন কানুন মানেন না বলেই এমনটা করছেন। রায়ের কপি যখন বিজ্ঞ আদালত তৈরি করবেন তখনি দিবে। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের কপি টাইপ করতে যুক্তিসঙ্গত যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময়েই কপি পাবেন তারা। এর এক মিনিটও দেরি হবে না। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন এতিমের টাকা মারে না। তাদের টাকা মেরে বড়লোক হয় না, আর লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনা করে না। আমরা এতিমের সঙ্গে থাকি। যারা এতিম তারা আমাদের সন্তান।
এরআগে গতকাল সকালে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওবায়দুল হক অফাই এর মরদেহ দেখতে তার গ্রামের বাড়ি হীরাপুরে যান আইনমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন- ‘খালেদা জিয়াকে আর কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়নি। কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে না।’ আইনমন্ত্রী আখাউড়া উপজেলা যুবলীগ আয়োজিত আনন্দ র‌্যালিতে অংশ নেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, জেলা পরিষদ সদস্য আবুল কাসেম ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সেলিম ভূঁইয়া, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বাদল প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status