দেশ বিদেশ

খুলনায় চুল রপ্তানি করে প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী লাখপতি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

বিউটি পার্লার থেকে কিংবা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা হয় নারীদের পরিত্যক্ত চুল। সেগুলো কারখানায় নিয়ে পরিষ্কার করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এরপর তা পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখান থেকে রপ্তানি করা হয় মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে। এভাবে পরিত্যক্ত চুল রপ্তানি করেই লাখপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বদিকে বসবাসকারী প্রায় অর্ধশত চুল ব্যবসায়ী।
খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করা হয় মূলত খুলনা ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে। এসব চুল লম্বায় ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। নকল চুল, পরচুলা, আসবাবপত্র, চুলসহ মাথার টুপি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এসব চুল।
ব্যবসায়ীরা জানান, বরিশাল বিভাগের নারীদের চুল লম্বা ও মোটা হওয়ায় চীনে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। প্রায় ৩০০ খুচরা ক্রেতার কাছ থেকে চুল কেনেন খুলনার ব্যবসায়ীরা। খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ইত্যাদি এলাকা থেকে এসব চুল সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন গড়ে এক মণ চুল সংগ্রহ করা হয়। গ্রামাঞ্চলের নারী ও বিউটি পার্লার হচ্ছে পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহের প্রধান উৎস।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও চুয়াডাঙ্গা খেলনা ঘরের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা জানান, এক যুগ ধরে নারীদের পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসা করছেন। এখানকার অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী খুচরা ক্রেতাদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে চুল সংগ্রহ করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের একটি পরিবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম এ ব্যবসা শুরু করেন জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, এ ব্যবসা করে অনেকই এখন লাখপতি। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৫০০-৩৭০০ টাকা কেজি দরে কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানিযোগ্য করা হয়। এরপর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি করা হয়।
ব্যবসায়ী জয়নাল জানান, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নারীদের পরিত্যক্ত চুল বর্তমানে মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে রপ্তানি করা হয়। ইতালি ও আমেরিকায় চাহিদা থাকলেও তাদের মান অনুযায়ী চুল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পরিত্যক্ত চুল বিক্রয়যোগ্য করার পর কুরিয়ারের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ওইসব দেশের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হয়। প্রতিদিন প্রায় এক মণ পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করা হয় তিন শতাধিক খুচরা চুল ক্রেতার কাছ থেকে।
খুচরা ব্যবসায়ী খোকন জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমি সাইকেলে করে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করি ও পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করি। এসব চুলের গুটি প্রতি কেজি ৩৫০০-৩৭০০ টাকায় খুলনার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। তিনি বলেন, খুলনার কয়রা উপজেলায় নারীদের চুল পাওয়া গেলেও সেটির কদর নেই। তবে বরিশালের নারীদের চুল লম্বা ও মোটা হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া যায়।
যেভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় পরিত্যক্ত চুল: পরিত্যক্ত চুলের গুটি সংগ্রহ করার পর তা শ্যাম্পু বা ওয়াশিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর কাঁচি (বড় ধরনের এক চিরুনি) দিয়ে চুল ছাড়ানো হয় এবং সাইজ অনুসারে আলাদা করে রোদে শুকাতে দেয়া হয়। সবশেষে আবার কাঁচি দিয়ে চুলের সব জট ছাড়িয়ে তা বিক্রির উপযুক্ত করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status