শেষের পাতা

স্মার্ট পোশাকের দিকে ঝুঁকছে উদ্যোক্তারা

এম এম মাসুদ

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বদৌলতে পোশাক ও ফ্যাশন শিল্পের বিশ্ব এক ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তন হচ্ছে শিল্প ও ভোক্তার আকাঙ্ক্ষায়। এ অবস্থায় বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট পোশাকের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, বাংলাদেশের পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিনিয়ত ক্রেতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পণ্যে নতুন বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বে স্মার্ট পোশাকের বাজারও বাড়ছে। ২০২৫ সালে প্রযুক্তিনির্ভর এসব পোশাকের বাজার ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। সেজন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে উদ্যোক্তাদের স্মার্ট পোশাক উৎপাদনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে পোশাক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এদিকে গত সোমবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাশন ও প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ ফ্যাশনোলজি সামিট’। বস্ত্র ও ফ্যাশন শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন। সামিটে ১১টি দেশের শীর্ষ ১৭ বিশেষজ্ঞ তাদের অভিজ্ঞতা ও ধারণা উপস্থাপন করেন। এতে বক্তা হিসেবে ছিলেন জুকি করপোরেশন জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার সুচি উতেনা, ইউনিভার্সাল রোবটসের প্রদীপ ডেভিড ও আইবিএম রিসার্চের রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ভিকাশ রয়কর।
এতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বদৌলতে পোশাক ও ফ্যাশন শিল্প এক ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিল্প ও ভোক্তার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ অবস্থায় একটি ব্র্যান্ড সৃষ্টি করে তা টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিনিয়ত ক্রেতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনত্ব আনতে হবে।
আইবিএম রিসার্চের রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ভিকাশ রয়কর বলেন, পোশাক রপ্তানির বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। বাড়াতে হবে উৎপাদন সক্ষমতা।
স্মার্ট পোশাকের ব্যবহার: সামিটের শেষ পর্বে স্মার্ট পোশাকের ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত 
হয়। এতে দেখা গেছে, স্মার্ট পোশাকের অভ্যন্তরে বিজলিবাতি যুক্ত করে নানা বর্ণের আলোর বিকিরণ। এটি নতুন কিছু নয়। তবে নতুনত্ব হলো- পোশাকের সঙ্গে সফটওয়্যার সংযুক্ত করে প্রোগ্রামেবল আলোর মাধ্যমে সিগন্যাল সরবরাহের প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিটি প্রদর্শন করেন স্পেনের কনস্ট্যানজা নামের একটি ব্র্যান্ড। তাদের দেখানো অন্য একটি প্রযুক্তি ছিল এমন, একটি পোশাক থেকে অন্যটির দূরত্ব বাড়তে বা কমতে থাকলে আলোর রং বদলে যেতে থাকে। এর মাধ্যমে একজন সহজেই তার সঙ্গীর অবস্থান বুঝতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। ফ্যাশনের সঙ্গে প্রযুক্তির এ সমন্বয় স্পোর্টস কিংবা নিরাপত্তার প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া এলইডি বাতিযুক্ত পোশাকে দেখানো হয়, মানুষের কথা কিংবা শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সেই বাতির রং পরিবর্তন হয়। আবার এলইডি বাতির এক জোড়া বিশেষ পোশাক ছিল। পোশাক দুটির মধ্যে দূরত্ব বাড়লে বাতির রং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া থ্রি-ডি প্রিন্টসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির পোশাক প্রদর্শন করা হয়। অন্যদিকে ভোক্তা চাইলে পোশাকটিকে ওয়াইফাই বা স্মার্ট মোবাইলের সঙ্গে যুক্ত কতে পারবে। স্প্যানিশ ব্র্যান্ড কনস্ট্যানজার মতো নেদারল্যান্ডস, আমস্টারডাম, প্যারিস, বৃটেন ও ভারত থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রযুক্তিনির্ভর পোশাক প্রদর্শন করেন সামিটে।
ভারতের ডেডএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের চিফ ডিজাইন অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার মৌ নাথ বলেন, পোশাক খাতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধাকে যুক্ত করতে ঢাকায় এ ধরনের সম্মেলন এটিই প্রথম। এছাড়া প্রযুক্তি কিভাবে পোশাক খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, ওয়েস্টেজ কমাতে পারে- সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে আমরা ৫০-৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে চাই। তবে প্রযুক্তিনির্ভর ভ্যালু অ্যাডেড (দামি) পোশাক উৎপাদন ছাড়া সেই জায়গায় যাওয়া যাবে না। তাই দেশের উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের এসব প্রযুক্তি ও পণ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতেই ফ্যাশনোলজি সামিটের আয়োজন। তিনি বলেন, আমরা উদ্ভাবনী মানসিকতার একটি দল তৈরি করতে চাই, যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের পোশাক তৈরি ও বিপণনের কেন্দ্রে পরিণত করবে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের অন্যতম লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নের পথকে সুগম করা। আগামীর পোশাক খাতকে প্রযুক্তি নির্ভর করার জন্যই ‘বাংলাদেশ ফ্যাশনলজি সামিট’ এর আয়োজন করার উদ্দেশ্য।
সামিটে ভবিষ্যতের কারখানায় অটোমেশন, রোবটের ব্যবহার ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া চাহিদা সৃষ্টি ও বাজারজাতকরণ এবং ক্রেতার পরিবর্তনশীল প্রত্যাশার সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্বের বিভিন্ন উদ্যোগের পর্যালোচনা করা হয়।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status