শেষের পাতা

দুর্নীতিবাজদের অবশ্যই বিচার হবে

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস করবে এবং জঙ্গিবাদে জড়াবে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। আমরা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা দেশকে উন্নত এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণ করতে পারবো। গতকাল ইতালির রোমের  পার্কো দি প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড এসপিএ’তে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির মামলা দায়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগেই প্রত্যেক মামলার তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। মামলাগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলাম। প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে এবং এর রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। আমি কোনো মামলা প্রত্যাহার করিনি এবং এর অনুমতিও দেইনি, কেন আমি এটা করবো। আমি জানতাম, আমিতো কোন দুর্নীতি করিনি। এ সময় তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, হিলারি ক্লিনটন সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস সে সময় পদ্মা সেতু প্রকল্পের দোষ ধরতে মুখিয়ে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই সময় তিন তিনবার আমার ছেলেকে এ ব্যাপারে হুমকিও দেয়। তিনি বলেন, এটি কানাডার আদালতেই প্রমাণ হয়েছে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ‘আমি বলেছিলাম আমি দুর্নীতি করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই ক্ষমতায় এসেছি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয়’। দেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে আদালতে। আদালত যখন দেখেছে বিএনপি নেত্রীর মাধ্যমে এতিমের টাকার সম্পূর্ণ অপব্যবহার হয়েছে তখন আদালত তাকে এই শাস্তির রায় দেয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এক্ষেত্রে আমাকে তিরস্কার এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কি যুুক্তি থাকতে পারে?
ইতালি শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপকর্মের কারণেই সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। ‘বিএনপি দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, দুর্নীতি ও বাংলাভাই সৃষ্টি করে এবং এই প্রেক্ষাপটেই আমরা জরুরি অবস্থা দেখেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা কে দিয়েছে? খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন, ইয়াজ উদ্দীন এই তিনজনই তো তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিলো। এ মামলা তো আওয়ামী লীগ দেয়নি।’ ২০০৭ সালে এই মামলা হয় এবং পরের বছরই এর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এই মামলা ১০ বছর ধরে চলে এবং মামলার শুনানির জন্য ২৩৬ কার্যদিবস ধার্য হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া আদালতে গেছেন মাত্র ৪০ দিন। খালেদা জিয়ার আপত্তির কারণে এই মামলায় তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয় এবং তিনি এর বিরুদ্ধে ২২ থেকে ২৪টি রিট করেন।
তিনি বলেন, যে টাকা খালেদা জিয়া এবং সংশ্লিষ্টরা অপব্যবহার করেছেন সে টাকা এতিমদের জন্য এসেছিল। কিন্তু এতিমদের পরিবর্তে সে টাকা তাদের নিজেদের তহবিলে চলে যায়। বিএনপি নেতারা বলেন, সেই টাকা তাদের তহবিলে রাখার ফলে দুই কোটি থেকে বেড়ে তিন কোটি হয়েছে। কিন্তু এতিমরা এ থেকে কি লাভটা পেলো। যদি খালেদা জিয়া বলতেন, সেই টাকা তিনি তার এতিম দুই পুত্রের জন্য রেখেছেন, তারও না হয় একটি যৌক্তিকতা ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, যখন মামলাটি করা হয় (ব্যরিস্টার) রফিকুল হক সে সময় বলেছিলেন খালেদা জিয়া ওই পরিমাণ টাকা জমা করে দিলেই মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) টাকার মায়া ছাড়তে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন টাকার যে মূল্য ছিল তা থেকে এক কোটি টাকা দিয়ে তিনি চারটি ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারতেন, এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই তিনি টাকার মায়া ত্যাগ করতে পারেননি বলেই আজকে এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে তিনি কারাগারে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরা আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এই মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতি করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়? তিনি বলেন, বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে, এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status