বই থেকে নেয়া
উত্তম কুমারের অজানা কথা (২৭)
‘যথাসময়ে আমার নতুন নাম হলো অরূপকুমার’
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-
সরোজবাবু বললেন, এই ছবিতে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে আমার কোনো অমত নেই, তবে-
সরোজ মুখার্জির কণ্ঠস্বর দ্বিধাজড়িত। এমন কিছু তিনি বলতে চান যাতে আমি হয়তো অখুশি হতে পারি। সেই চিন্তা করেই তিনি যেন ভেতরকার কথাগুলো স্পষ্ট করে ব্যক্ত করতে পারছেন না। ওঁর মুখে ভাষা ফোটার আগে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বললাম, কিছু দ্বিধা করবেন না, আপনি যা বলতে চান বলুন না। সরোজবাবু বললেন, তোমার নামটা পালটাতে হবে, যদি রাজি থাকো বলো- আমি তখনই রাজি হয়ে গেলাম।
সরোজ মুখার্জিও আমাকে ‘মর্যাদা’ ছবির নায়ক স্থির করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। যথাসময়ে আমার নতুন নাম হলো অরূপকুমার। এ যেন আমার নবজন্ম। নাম পরিবর্তন করায় মনটা যে আমার ভারাক্রান্ত হয়নি তা নয়। নিজেকে নানাভাবে সান্ত¡না দিলাম। বাড়িতে এসে মাকে আমি সব কথাই খুলে বললাম। বন্ধুরাও সেদিন আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি।
পোর্ট কমিশনার্সের চাকরিটা আমার তখনও বিদ্যমান। ছুটির পর ছুটি নিয়ে চলেছি। আবার ছুটি নিলাম। নিতান্ত কতগুলি মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে এই ছুটি নেওয়া। অফিসের অনেকেই আমার এই ছুটি ও কামাইয়ের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। আবার অনেক সহকর্মীই আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন।
সেই ছুটি নিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম সাধনার উত্তাল সমুদ্রে। আবার আমার অভিযান শুরু হলো।
নির্দিষ্ট দিনে নতুন নামধারী আমি অরূপকুমার হাজির হলাম এম.পি. স্টুডিওতে।
পরবর্তীকালে অনেকের লেখায় পড়েছি এই ছবির নায়িকা ছিলেন মনীষা দেবী, আসলে মনীষা দেবী একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর নায়িকা ছিলেন স্মৃতিরেখা বিশ্বাস। এই ছবির প্রযোজক সরোজ মুখার্জি ছিলেন রায়বাহাদুর সত্যেন মুখার্জির ছেলে। এরা পরিবেশক সংস্থারও মালিক ছিলেন।
এবার দক্ষিণ থেকে একেবারে উত্তরের মধ্য-সীমান্তে। ভবানীপুর থেকে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় ছাড়িয়ে চিড়িয়ামোড় পিছনে রেখে সাউথ সিঁথি আর বরানগরের সঙ্গমস্থল। বাস থেকে নামলাম।
এম.পি. স্টুডিওর নামটা তখন আমার কাছে স্বর্গপুরীসম। এমপিকে ঘিরে আমার মনে তখন এক মধুর ইমেজ। সেই স্টুডিওতে এই আমার প্রথম প্রবেশ। নিয়মকানুন রক্ষা করে সরাসরি আমি স্টুডিওর আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। যথাসময়ে আমি ‘মর্যাদা’ ছবিতে কাজও শুরু করে দিলাম।
এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আমি আবার আমার কর্তব্য সম্পাদন করে চললাম নিষ্ঠার সঙ্গে। কাজ করি। বাড়ি যাই। মাঝে মাঝে অফিস করি। আর শুধু গৌরীর কথা ভাবি।
বিয়ের দিন আরও এগিয়ে এসেছে।
‘মর্যাদা’র শুটিং করছি এমন সময়ে একদিন স্টুডিওতে আমার কাছে এলেন বিমলবাবু। বিমল ঘোষ। এমপি প্রোডাকশন্সের ম্যানেজার বিমলবাবুর নামডাক তখন অনেক। আমিও সেই নামের সঙ্গে পরিচিত।
এমপি প্রোডাকশন্সের শিল্পীরা তখন মাস মাইনেতে কাজ করতেন।
বাঁধা অনেক শিল্পী তখনই এই কোম্পানিতে। তৎসত্ত্বেও বিমলদা অর্থাৎ বিমল ঘোষ একেবারে সরাসরি আমাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি ফ্লোর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম বিমলদার কাছে।
বিমলবাবু আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন, তারপর বেশ ধীর কণ্ঠস্বরে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন।
বললেন, পাহাড়ী সান্যালের কাছ থেকে তোমার কথা অনেকবার শুনেছি-
খুশি হলাম। বলা বাহুল্য, পাহাড়ীদা তখন ‘মর্যাদা’ ছবিতেও কাজ করছেন। সেই ছবির অন্যতম প্রধান শিল্পী তখন পাহাড়ীদা। বেশিদিনের পরিচয় নয়, তবুও পাহাড়ী সান্যালের ভিতরকার মানুষটাকে আমি সেই মুহূর্তে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারলাম না।
বিমলদা প্রশ্ন করলেন, তুমি আমাদের কোম্পানিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক?
নির্দ্বিধায় উত্তর দিলাম, নিশ্চয়ই ইচ্ছুক।
বিমলদা আনন্দিত হলেন। বললেন, তোমার ঠিকানাটা আমাকে দাও, কোম্পানির সঙ্গে আলপা-আলোচনা করে আমি তোমাকে খবর দেব, কেমন?
সরোজবাবু বললেন, এই ছবিতে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে আমার কোনো অমত নেই, তবে-
সরোজ মুখার্জির কণ্ঠস্বর দ্বিধাজড়িত। এমন কিছু তিনি বলতে চান যাতে আমি হয়তো অখুশি হতে পারি। সেই চিন্তা করেই তিনি যেন ভেতরকার কথাগুলো স্পষ্ট করে ব্যক্ত করতে পারছেন না। ওঁর মুখে ভাষা ফোটার আগে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বললাম, কিছু দ্বিধা করবেন না, আপনি যা বলতে চান বলুন না। সরোজবাবু বললেন, তোমার নামটা পালটাতে হবে, যদি রাজি থাকো বলো- আমি তখনই রাজি হয়ে গেলাম।
সরোজ মুখার্জিও আমাকে ‘মর্যাদা’ ছবির নায়ক স্থির করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। যথাসময়ে আমার নতুন নাম হলো অরূপকুমার। এ যেন আমার নবজন্ম। নাম পরিবর্তন করায় মনটা যে আমার ভারাক্রান্ত হয়নি তা নয়। নিজেকে নানাভাবে সান্ত¡না দিলাম। বাড়িতে এসে মাকে আমি সব কথাই খুলে বললাম। বন্ধুরাও সেদিন আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি।
পোর্ট কমিশনার্সের চাকরিটা আমার তখনও বিদ্যমান। ছুটির পর ছুটি নিয়ে চলেছি। আবার ছুটি নিলাম। নিতান্ত কতগুলি মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে এই ছুটি নেওয়া। অফিসের অনেকেই আমার এই ছুটি ও কামাইয়ের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। আবার অনেক সহকর্মীই আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন।
সেই ছুটি নিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম সাধনার উত্তাল সমুদ্রে। আবার আমার অভিযান শুরু হলো।
নির্দিষ্ট দিনে নতুন নামধারী আমি অরূপকুমার হাজির হলাম এম.পি. স্টুডিওতে।
পরবর্তীকালে অনেকের লেখায় পড়েছি এই ছবির নায়িকা ছিলেন মনীষা দেবী, আসলে মনীষা দেবী একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর নায়িকা ছিলেন স্মৃতিরেখা বিশ্বাস। এই ছবির প্রযোজক সরোজ মুখার্জি ছিলেন রায়বাহাদুর সত্যেন মুখার্জির ছেলে। এরা পরিবেশক সংস্থারও মালিক ছিলেন।
এবার দক্ষিণ থেকে একেবারে উত্তরের মধ্য-সীমান্তে। ভবানীপুর থেকে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় ছাড়িয়ে চিড়িয়ামোড় পিছনে রেখে সাউথ সিঁথি আর বরানগরের সঙ্গমস্থল। বাস থেকে নামলাম।
এম.পি. স্টুডিওর নামটা তখন আমার কাছে স্বর্গপুরীসম। এমপিকে ঘিরে আমার মনে তখন এক মধুর ইমেজ। সেই স্টুডিওতে এই আমার প্রথম প্রবেশ। নিয়মকানুন রক্ষা করে সরাসরি আমি স্টুডিওর আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। যথাসময়ে আমি ‘মর্যাদা’ ছবিতে কাজও শুরু করে দিলাম।
এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আমি আবার আমার কর্তব্য সম্পাদন করে চললাম নিষ্ঠার সঙ্গে। কাজ করি। বাড়ি যাই। মাঝে মাঝে অফিস করি। আর শুধু গৌরীর কথা ভাবি।
বিয়ের দিন আরও এগিয়ে এসেছে।
‘মর্যাদা’র শুটিং করছি এমন সময়ে একদিন স্টুডিওতে আমার কাছে এলেন বিমলবাবু। বিমল ঘোষ। এমপি প্রোডাকশন্সের ম্যানেজার বিমলবাবুর নামডাক তখন অনেক। আমিও সেই নামের সঙ্গে পরিচিত।
এমপি প্রোডাকশন্সের শিল্পীরা তখন মাস মাইনেতে কাজ করতেন।
বাঁধা অনেক শিল্পী তখনই এই কোম্পানিতে। তৎসত্ত্বেও বিমলদা অর্থাৎ বিমল ঘোষ একেবারে সরাসরি আমাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি ফ্লোর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম বিমলদার কাছে।
বিমলবাবু আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন, তারপর বেশ ধীর কণ্ঠস্বরে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন।
বললেন, পাহাড়ী সান্যালের কাছ থেকে তোমার কথা অনেকবার শুনেছি-
খুশি হলাম। বলা বাহুল্য, পাহাড়ীদা তখন ‘মর্যাদা’ ছবিতেও কাজ করছেন। সেই ছবির অন্যতম প্রধান শিল্পী তখন পাহাড়ীদা। বেশিদিনের পরিচয় নয়, তবুও পাহাড়ী সান্যালের ভিতরকার মানুষটাকে আমি সেই মুহূর্তে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারলাম না।
বিমলদা প্রশ্ন করলেন, তুমি আমাদের কোম্পানিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক?
নির্দ্বিধায় উত্তর দিলাম, নিশ্চয়ই ইচ্ছুক।
বিমলদা আনন্দিত হলেন। বললেন, তোমার ঠিকানাটা আমাকে দাও, কোম্পানির সঙ্গে আলপা-আলোচনা করে আমি তোমাকে খবর দেব, কেমন?