অনলাইন

অবস্থান কর্মসূচিতে ফখরুল

‘দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে’

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর কারণে তার শক্তি অনেক বেড়ে গেছে। দেশনেত্রীকে কারাগার থেকে এ দেশের মানুষ অতিসত্বর বের করে আনবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে- দলের ভেতরে ভাঙন শুরু হবে। নেতাকর্মীর শূণ্যতায় ভুগবে বিএনপি। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ খালেদা জিয়ার পেছনে রয়েছেন। আগের চেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো অনেক বেশি শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। আদালতের দণ্ডে কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে আজ বিএনপির ডাকা অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। 

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে জনমানবশূন্য একটি পরিত্যক্ত কারাগারে পাঠিয়ে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে প্রচুর মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ১৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। ফখরুল বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক কোন অধিকার নেই, আগেও ছিল না।

উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, এই কর্মসূচি থেকে আমরা শপথ নেই। জনতার উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করে আনবো। সেই লক্ষ্য আন্দোলনকে আরো বেগবান করি। খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে গিয়ে সরকার ভেবেছে বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে।  সরকার ভাবছে, বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে, সেটা যাবে না। জনগণ কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্ত করে নিয়ে আসবে। অতিতে তাদের নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন। মানুষ তাকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিল। আর খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের নেত্রী। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। রাজপথে নামলে লাখ লাখ মানুষ তার পিছনে আসে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সাথে আছেন। তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিত্যাক্ত জণমানবশূণ্য কারাগারে কারাগারে দেশনেত্রীকে রেখে বর্তমান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘণ করেছে। মানবতা বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করেছে। এর জন্য তাদের (সরকার) বিচার হবে। আওয়ামী লীগের সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা। সারাদেশে প্রায় ১৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।

ফখরুল বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলে দিতে চাই আমাদের এই লড়াই ও সংগ্রাম দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনবার লড়াই। এই লড়াই নেতাকর্মীদের মুক্ত করবার লড়াই। বাংলাদেশের মানুষ এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার লড়াই।

অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে তিন দিন সাধারণ কয়েদী হিসেবে রাখা হয়েছে। যারা খালেদা জিয়াকে সাধারণ কয়েদী হিসেবে রেখেছেন তাদের বিচার চাই আমরা। খালেদা জিয়া খুব শিগগির মুক্ত হবেন এমন আশা ব্যক্ত করে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রীকে মুক্ত করার আর কোন বিকল্প পথ নেই। কিন্তু এর সাথে আইনী লড়াইও চলবে। কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া জেলে বন্দি মানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বন্দি। খালেদাকে জেলে রেখে দেশ পরাধীন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের জনগণ সেটা হতে দেবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিচারের নামে প্রহসন করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। সুতরাং আমরা সুবিচার পাইনি। এরকম অত্যাচারি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সুবিচার পাওয়ার আশা করা বোকামী। এরপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনী লড়াই করছি। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা (সরকার) ভাবছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচন করবেন। ভুলে যান। কারণ খালেদা জিয়া ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন রিজভী। পরবর্তী রাতে নয়াপল্টন থেকে প্রেরিত ক্ষুদে বার্তায় ভ্যেনু পরিবর্তন করে রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়। সর্বশেষ আজ সকাল ১০টায় ফের ভেন্যু পরিবর্তন করে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান রিজভী। বিএনপির এই নেতা বলেন, ডিএমপি কমিশনার আমাদেরকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালন করার কথা বলেছেন। বিএনপির পক্ষে কর্মসূচিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা গতকালের মতো আজো খালেদার মুক্তির দাবিতে ডাকা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ। অবস্থান কর্মসূচিতে ২০ দলীয় জোট এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ- সংগঠনের প্রায় ২ হাজারের মত নেতাকর্মীর অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এসময় তারা, বুলেট দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, আমার মা জেলে কেনো খুনি হাসিনা জবাব দেসহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির অবস্থান কর্মসূট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেন।

[কাফি/আলীম/এইচএম]

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status