বিশ্বজমিন

মিয়ানমারে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

দেশি, বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করছে মিয়ানমার। সংবাদ মাধ্যমের গলা টিপে ধরতে সামরিক জান্তার শাসনামলে যে আইন প্রয়োগ করা হতো দৃশ্যত বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক অং সান সুচির আমলে সেই নিয়মই নতৃন করে কার্যকর করা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সরকারের নিষ্পেষণের কারণে কিছু সাংবাদিক দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অধিকার রক্ষায় সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-এর (সিপিজে) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিজ দেশ মিয়ানমারে অবস্থান করে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে আর নিরাপদ নন পুলিৎজার প্রাইজ বিজয়ী সাংবাদিক ইস্থার হুসান। তিনি বার্তা সংস্থা এপির সাংবাদিক। তিনি রিপোর্ট করেছেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ¯্রােতের মতো দেশ ত্যাগ, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বহুল বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী অপারেশন, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি সৃষ্ট সঙ্কট যেভাবে মোকাবিলা করেছেন তা নিয়ে। এসব রিপোর্টের বেশির ভাগই দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে স্পর্শকাতর মনে হয়েছে। তাই তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ জন্য গত বছর দেশ ছেড়েছেন তিনি। ইস্থার হুসান গত নভেম্বরে সরকারি তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েন। এর কারণ, সরকার দাবি করে তিনি অং সান সুচিকে ভুলভাবে তুলে ধরেছেন। সুচি অবৈধ অভিবাসী, সন্ত্রাস ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা নিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে তখন সুচির একজন সমর্থক তাকে হত্যার হুমকি দেন নিজের ফেসবুক পেজে। ওই সময়ে ওই পেজটির অনুসারীর সংখ্যা ছিল তিন লাখের বেশি। এর আগে অজ্ঞাত এক ইস্থার হুসানের বাসার বাইরে গিয়ে এক রাতে তার নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। পরে নিরাপত্তাহীনতায় হুসান ডিসেম্বরে চলে যান থাইল্যান্ডে। সিপিজের সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, ইস্থার হুসানের বাসায় গিয়েছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। তিনি কোথায় আছেন পড়শিদের কাছে তারা জানতে চেয়েছে।
সিপিজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ক্রমবর্ধমান হারে ঔপনিবেশিক ও সামরিক শাসনের সময়কার অনেক আইন ব্যবহার করছে। অনেক সাংবাদিক ও অধিবার কর্মীরা বলছেন, এসব আইনের সংশোধন প্রয়োজন অথবা এগুলো বাদ দেয়া উচিত। এবং তা হওয়া উচিত অং সান সুচি ক্ষমতায় থাকতেই। কারণ, তিনি উদার সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ম্যান্ডেট পেয়েছেন। ওদিকে বার্তা সংস্থার দু’ সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কাইওয়া সোয়ে ও’কে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হচ্ছে। ওই দু’ সাংবাদিককে ১২ই ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াঙ্গুনে। উল্লেখ্য, রয়টার্স সম্প্রতি ‘মিয়ানমারে গণহত্যা’ শীর্ষক একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ধারণা করা হয়, এ কারণে ওয়া লোন এবং কাইওয়া সোয়ে ও’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ, বৌদ্ধ ও সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছিলেন। মিয়ানমারে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবর লুফে নেয় আন্তর্জাতিক মিডিয়া। এর জবাবে গত মাসে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং স্বীকার করেন, ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে তার সেনারা ও গ্রামবাসী। ওইসব নিহতের মৃতদেহ পাওয়া গেছে ইন ডিন গ্রামের গণকবরে। এই যখন অবস্থা তখন রয়টার্সের সাংবাদিকদের বিচারের আগেই বন্দি করার পক্ষ নিয়েছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতিন কাইওয়া ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status