দেশ বিদেশ

চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত ৪০০ পরিবারে জমি নিবন্ধনের আহাজারি!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অধিকৃত জমির মালিকদের বরাদ্দকৃত জমির রেজিস্ট্রেশন হয়নি ২০ বছরেও। বিনামূল্যে এ জমি রেজিস্ট্রেশন দেয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া জমির রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না। এ নিয়ে পুনর্বাসিত ৪০০ পরিবারে চলছে নিত্য আহাজারি।  পুনর্বাসিতদের অভিযোগ, শাহ আমানত বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছারকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে পুনর্বাসিতদের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রেশনের নামে প্লটপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করছেন। সোলায়মান নামে তারই এক অনুসারী বর্তমানে এই টাকা আদায় করেন।
বিষয়টি জানার জন্য সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, আমি ফোনে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি না। কথা বলতে চাইলে পতেঙ্গায় আমার অফিসে আসেন। অফিসে গিয়ে না পেয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, পরে আসেন। কবে আসবো প্রশ্ন করা হলেও সদুত্তর না দিয়ে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। তবে বর্তমান কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরীর ছেলে মো. ওয়াহিদ বলেন, ১৯৯৭ সালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গার পোড়াপাড়া, মিয়াজিপাড়া, ডুরিয়াপাড়া (আংশিক), চরবস্তি (আংশিক) এলাকায় প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে ক্ষতিপূরণসহ বিজয়নগর এলাকায় পুনর্বাসন করে।
এ সময় কাউন্সিলর ছিলেন নুরুল আবছার। তিনি এলাকার লোকজনকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন; আবার উচ্ছেদে সহযোগিতার নামে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন হাতিয়ে নেন।
অথচ সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক অধিকৃত এলাকা ছেড়ে বিজয়নগরেই পুনর্বাসিত হন লোকজন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ব্লক-এ, ব্লক-বি, ব্লক-সিতে বিভক্ত করে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। যা অল্প সময়ের মধ্যে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে হস্তান্তর করার কথা।
প্লটগুলোতে ঘরবাড়ি তৈরি করে শান্তিপূর্ণ বসবাস করে আসছেন পুনর্বাসিতরা। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শুরু হয় গড়িমসি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য বার বার ধর্ণা দেয়া হলেও দেখা মিলে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য বিমানবন্দরে গেলে ঢুকতেও দেয়া হয় না পুনর্বাসিতদের। বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশন থেকে বলা হয়, সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছারের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করলে পুনর্বাসিতদের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্লটপ্রতি ৩০ হাজার টাকা দিতে বলেন তিনি। নিরুপায় হয়ে শ-খানেক পরিবার দাবিকৃত টাকা দিয়েই জমি রেজিস্ট্রশন নিয়েছেন বলে জানান ওয়াহিদ।
৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার কথা স্বীকার করে বিজয়নগরের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, উচ্ছেদের সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে জমি রেজিস্ট্রি দেয়ার কথা দিলেও গত দেড়যুগেও পায়নি। তাই গত বছরের শুরুর দিকে টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন নিয়েছি।
তিনি বলেন, টাকা না দেয়ায় পুনর্বাসনের আরো ৪০০ পরিবার এখনো জমি রেজিস্ট্রেশন পায়নি। এদের অনেকেরই টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে জমি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দুশ্চিন্তা ও আহাজারি করছেন পুনর্বাসিত পরিবারগুলো।
পতেঙ্গা ভূমি অফিসের পিয়ন মো. হানিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টাকা দিতে না পারায় আমিও জমি রেজিস্ট্রেশন পায়নি। টাকা নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বললেই জমি রেজিস্ট্রি হই, না হলে হয় না। আদায় করা টাকা নুরুল আবছার ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করেন বলে দাবি করেন তিনি।
একই কথা বলেন, বিজয়নগর বি-ব্লকে পুনর্বাসিত পরিবারের অভিভাবক লাইলী বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় অধিকৃত জমি ছাড়লেও পুনর্বাসনের জমি রেজিস্ট্রেশন দেখে মরতে পারেনি। অভাবগ্রস্ত হওয়ায় জমি রেজিস্ট্রশনের জন্য টাকাও দিতে পারছি না।
এ-ব্লকের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশন না পেয়ে পুনর্বাসিত আরো ৪০০ পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় দিনযাপন করছে। জমি রেজিস্ট্রশনের জন্য আগে সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছার কাছে এখন তার প্রতিনিধি সোলায়মানের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে সোলায়মান টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আবছার জড়িত। প্লটপ্রতি ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছেন তিনি। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারাও এতে জড়িত। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির বলেন, পুনর্বাসিতদের বরাদ্দকৃত জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা আদায়ের বিষয়ে আমি অবগত নই। জমি রেজিস্ট্রেশনের নামে কারা টাকা আদায় করছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status