শেষের পাতা

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসছে চীনা প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আসছে চীন। দেশটির দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে। ডিএসই বোর্ড এরই মধ্যে এ অংশীদারির অনুমোদন চূড়ান্ত করেছে। এখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন পেলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
জানা গেছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ (এসজেডএসই) নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর পার্টনার হতে ২২ টাকা দরে ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনছে। পাশাপাশি কনসোর্টিয়াম ৩৭ মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে।
ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ডিএসইর চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আহ্বানের বিপরীতে যেসব দরপত্র জমা পড়েছিল, গত সপ্তাহে ডিএসইর পর্ষদ সভায় ওই সেগুলো খোলা হয়। চীনের এই কনসোর্টিয়ামের পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কনসোর্টিয়ামও প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে রয়েছে- ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার ফান্ড বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চীনের তথা বিশ্ব শেয়ারবাজারের প্রভাবশালী দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের জন্য চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ২২ টাকা দরে মোট ৯৯২ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। আর ডিএসইর কার্যক্রমের মানোন্নয়নে বিনামূল্যে উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করবে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০৭ কোটি টাকা।
ডিএসইর এক কর্মকর্তা জানান, তিন দেশি কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর ২৫.১ শতাংশ শেয়ার প্রতিটি ১৫ টাকা দরে কিনতে প্রস্তাব দেয়। কারিগরি সহায়তারও প্রস্তাব দেয়। এদের মধ্যে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকেই গ্রহণ করলো ডিএসই। ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসার পর এ কনসোর্টিয়াম তাদের প্রতিনিধিকেও ডিএসইর পর্ষদে বসাবে। তখন ডিএসইর চেহারা আমূল পাল্টে যাবে।
অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বড় এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হলে দেশি-বিদেশি কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আরো আস্থাশীল হয়ে উঠবে বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার জন্য ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৩ করা হয়। কার্যক্রমে কৌশলগত অংশীদার নেয়া এবং তাদের জন্য মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়।
২০১৩ সালের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে। ৩৫ শতাংশ বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বাকি ৪০ শতাংশ থাকবে ট্রেক হোল্ডার বা মালিকদের কাছে। উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলগত অংশীদার নিতে চায় ডিএসই। এর আগেও একবার কৌশলগত অংশীদারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তখন দেশি-বিদেশি কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিলেও ডিএসইর কাছে ওইসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
এদিকে চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অংশীদার হওয়ার খবরে বেশ চাঙাভাবে ফিরেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। রোববার প্রধান বাজার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। একদিনের হিসাবে ডিএসইএক্সের সূচকে এই বৃদ্ধি ২১ মাসের মধ্য সর্বোচ্চ।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি এবং ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকেই অংশীদার হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। আর এই খবরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মনে করছেন এই বাজার বিশ্লেষক। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে এবং প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে স্থানীয় বিনিয়োগও বাড়বে। সব মিলিয়ে বাজার আরো ভালোর দিকে যাবে। এমন আভাস পেয়েই বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন, বাজার চাঙা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status