অনলাইন

‘শেষবারের মতো আব্বার সাথে দেখা করতে দে’

রাহুল এম ইউসুফ, জাবি প্রতিনিধি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৫:২৫ পূর্বাহ্ন

‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। মরার আগে তোরা আমার শেষ ইচ্ছা পূরণ কর। আমার আব্বার সাথে দেখা করতে দে।’ এভাবেই প্রলাপ করছিলো র‌্যাগিংয়ের শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার কাইকোরিয়াকান্দা গ্রামের মো. মিজানুর রাহমান সদ্য ক্লাস শুরু করেছে জাবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। চালাক আর চাতুর্য শেখানোর নামে বিভাগের সিনিয়ররা তাকে মানসিক ও শারীরিক চাপ প্রয়োগ করে মানসিক ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুক্রবার রাতে তার পিতা দেখা করতে আসলে সে কাউকে চিনতে পারেনি। বলেছে অসংলগ্ন কথা-বার্তা।
জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে করা এমন বর্বর ও নিষ্ঠুর আচরণে হতবাক হয়েছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। অপরদিকে একমাত্র ছেলের মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখে ভেঙে পড়েছে মিজানুরের পিতা-মাতাসহ পুরো পরিবার।
মিজানুরের বন্ধুদের বরাত দিয়ে জানা যায়, বুধবার দুপুরে বিভাগের ৪৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা তাদের (৪৭তম আবর্তন) সাথে পরিচিত হওয়ার নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। মিজানুর সরল-সোজা হওয়ার কারণে সিনিয়ররা তাকে আলাদাভাবে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়াসহ শারীরিক নির্যাতন করে। এছাড়া সংযুক্ত শহীদ সালাম বরকত হল ছেড়ে আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হলে আসতেও সে হলের সিনিয়ররা চাপ প্রয়োগ করে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও তাকে বিভাগের সিনিয়ররা ধমক ও হুমকি দিয়েছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনার পর মিজানুর বৃহস্পতিবার রাতে থেকে হলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে দেখতে আসলে ‘তুই আমার জীবন শেষ করেছিস, তোরা আমাকে মেরে ফেলবি’ এমন অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এমনকি শুক্রবার দুপুরে সে তার বন্ধুদেরকে বলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ‘শেষ বারের মতো তোরা আমার আব্বার সাথে দেখা করতে দে’।
তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে রাতে তার পিতা ও চাচা ক্যাম্পাসে আসে। সাক্ষাতে স্বজনদের মিজানুর চিনতে পারেনি। ঘটনা শুনে হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। ছেলেকে এ অবস্থায় দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে মিজানুরের পিতা। ডাক্তারের কাছে যেতে অস্বীকার করে সে বলে, ‘মায়ের সাথে দেখা করবো, তোরা আমার মায়ের কাছে নিয়ে চল’। এমতাবস্থায় ডাক্তারের রুমের দরজার সামনে বসিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বিশ্রামের জন্য সাভারে তার চাচার বাসায় নেওয়া হয়।
শনিবার দুপুরে চাচা জয়নাল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে মানবজমিনকে তিনি বলেন, মিজানুরের অবস্থার অবনতি হয়েছে। সে কোনো স্বজনকেই চিনতে পারছে না। এমনকি কাউকে দেখলেই সে ভয় পাচ্ছে। এদিকে র‌্যাগিংয়ের সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে শুক্রবার রাত ১টার দিকে বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের মামুন, হিমেল, সুদীপ্ত ও ক্লাস প্রতিনিধি আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকারী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। তবে তাদের কথা শুনে যতটুকু বোঝা গেছে তারা র‌্যাগিংয়ের সাথে জড়িত ছিল। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় একাডেমিক বৈঠকে ঘটনার সাথে জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন জানাবো। এদিকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনার জাড়িতদের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

[এফএম]
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status