শরীর ও মন

ক্যানসার রোধে করণীয়

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ১:০৬ পূর্বাহ্ন

ক্যানসার শব্দটি শুনলে সবাই আঁতকে ওঠেন। অনেকের ধারণা, একবার ক্যানসার হওয়া মানেই ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু। এ ধারণা একেবারেই অমূলক। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন আর ক্যানসার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। শুরুতেই দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে এ রোগের চিকিৎসা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভও সম্ভব। নিত্যনতুন অধিক কার্যকরী কেমোথেরাপি জাতীয় ওষুধ আবিষ্কৃত হচ্ছে, রেডিওথেরাপিসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগে বেশকিছু ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করছে। উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যানসার দ্বিতীয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৃতীয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ১২ ভাগ মৃত্যুর জন্য ক্যানসারই দায়ী। তাই ক্যানসার হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। একটু সচেতন হলেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যানসার নামক এই বিভীষিকার হাত থেকে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের দরকার যথাযথ শিক্ষা ও সচেতনতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যানসারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কারণ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ ক্যানসারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত তা হলো ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা। মনে রাখতে হবে ধূমপানে বিষপান। অন্যান্য তামাক জাতীয় দ্রব্য যেমন সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধ করা। শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ এবং অন্য সব ধরনের নেশা পরিহার করা। খাদ্যাভ্যাস সুন্দরভাবে অনুসরণ করা, যেমন সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ ও এন্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খাওয়া, তাজা মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, চর্বি জাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যালযুক্ত খাবার বর্জন, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় বর্জন, রঙিন খাদ্য ও পানীয় বর্জন ইত্যাদি। আর্সেনিকমুক্ত পানি পান নিশ্চিত করা। নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম এবং সঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের ওজন ঠিক রাখা। যারা কসমেটিকস ব্যবহার করেন তারা যেন ভেজাল ও নিম্নমানের কসমেটিকস পরিহার করেন। দীর্ঘসময় সরাসরি সূর্যের নিচে না থাকা উচিত, প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা ভালো। রক্তদান বা গ্রহণ অথবা যেকোনো ইনজেকশন গ্রহণের সময় এবং অ্যান্ডোস্কপি, কলোনোস্কপি ইত্যাদি পরীক্ষার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। বেশ কিছু জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব, যেমন হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা ইত্যাদি। যেসব জীবাণু এবং রোগব্যাধি ক্যানসার তৈরি করতে পারে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা করা। কর্মক্ষেত্রে ক্যানসার তৈরিকারী রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শ পরিহার করা। এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা। পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে বায়ু ও পানি দূষণ বন্ধ করা। শরীরের কোথাও চাকা বা গোটা, ক্ষত, তিলের রঙ পরিবর্তন, দীর্ঘদিনের জ্বর, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, খাদ্যে অরুচি, পায়খানার কোনো পরিবর্তন (যেমন পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য), প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে অবহেলা না করা। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরই উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যাতে শরীরে কোনো ক্যানসার দানা বাঁধতে শুরু করলে তা প্রাথমিক অবস্থায়ই দমন করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের বৃহদান্ত্র বা কোলন, মহিলাদের জরায়ুমুখ ও স্তন, পুরুষদের প্রোস্টেট ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত। এসব স্থানে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে বিধায় নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব। ২০১৬-২০১৮ এই তিন বছরের জন্য বিশ্ব ক্যানসার দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘উই ক্যান, আই ক্যান।’ আমরা পারি, আমি পারি। আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবস।
লেখক: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status