বাংলারজমিন
শিবচর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
৮ মে ২০২৪, বুধবারআদালতের রায় জালিয়াতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র (আন্তঃপ্রাথমিক) কমমূল্যে ছেপে কয়েকগুণ বাড়তি টাকায় বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের শোকজের নামে হাজার হাজার টাকা আদায়, মাতৃকালীন ছুটি পাশের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা, শিক্ষকদের ব্যাংক লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে টাকা আদায়, নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরিদের বেতন-ভাতা সংশোধনের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের ডেপুটেশনের জন্য টাকা আদায়, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কাজ না করিয়েই উত্তোলনসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী সম্প্রতি এ অভিযোগ করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র মেরামতের নামে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকক্ষ মেরামতের জন্য এক থেকে দুই লাখ টাকা করে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ সকল বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোনো প্রকার মেরামতের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ মেরামতের কাজের জন্য ‘রুটিন মেরামত’ বাবদ বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ হয় প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরমধ্যে বাড়তি চাহিদা দিয়ে কোনো কোনো বিদ্যালয়ের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেও কোনো মেরামতের কাজই বিদ্যালয়গুলোতে হয়নি।
নামেমাত্র মেরামত করে যোগসাজশে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে বছরে শিক্ষার্থী অনুপাতে ‘স্লিপ’ বাবদ গড়ে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত টাকা বিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণে ব্যয় হয়ে থাকে। তবে অযাচিত ভাউচার দেখিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ে প্রদানকৃত প্রতিটি খেলনার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা! এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকদের ঠিকাদারি, দোকান, ব্যবসাসহ নানা সুবিধা দিয়ে মাসে মাসে উৎকোচ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির একাধিক নেতারা জানান, রুহুল আসলাম স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের কথা প্রধান শিক্ষকরা আমাদের কাছে বলেন। কিন্তু কেউ স্যারের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করার সাহস পায় না। স্যার বিষয়গুলো এমন ভাবে সমাধান করতো যা প্রকাশ করার সাহস কেউ পায়নি। প্রশ্নপত্রের বিষয়টি আমরা মূল্য কম বেশি জানি না তবে আমরা অফিস থেকে প্রতিটি প্রশ্ন ২০ থেকে ২৫ টাকায় ক্রয় করেছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উত্তম কুমার সরকার মুঠোফোনে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এরকম দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আশাকরি, সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।