অনলাইন
না ফেরার দেশে আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী কোচ মেনোত্তি
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ সপ্তাহ আগে) ৬ মে ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
চলে গেলেন আর্জেন্টিনাকে ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতানো ক্যারিশম্যাটিক কোচ সেজার লুইস মেনোত্তি। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এক্স হ্যান্ডেলে মেনোত্তির মৃত্যুর খবর জানিয়ে এএফএ লিখেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন অত্যন্ত শোকের সঙ্গে বর্তমান জাতীয় দলের পরিচালক ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে। বিদায় প্রিয় ফ্লাকো!’
তবে বিবৃতিতে মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মেনোত্তিকে মার্চ মাসে গুরুতর রক্তাল্পতা নিয়ে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি এপ্রিল মাসে ফ্লেবিটিসের জন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন এবং পরে দেশে ফিরে আসেন বলে জানা গেছে। ফুটবলের প্রতি অনুরাগ এবং এর মেকানিক্স ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে মেনোত্তি একজন প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন তুখোড়। আর্জেন্টিনার ফুটবলে তাকে সবচেয়ে প্রভাবশালী কোচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মেনোত্তি একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং আর্জেন্টিনার কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগী সদস্য হবার পাশাপাশি বক্সিং অনুরাগী ছিলেন। লাতিন আমেরিকান লেখক মারিও বেনেদেত্তি, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, জর্জ লুইস বোর্হেস, মারিও সাবাতো এবং জোয়ান ম্যানুয়েল সেরাতের কাজের একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিলেন। তিনি রোজারিও সেন্ট্রাল (১৯৬০-৬৩ এবং ১৯৬৭) এর একজন তরুণ খেলোয়াড় হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তারপরে রেসিং ক্লাব (১৯৬৪) এবং বোকা জুনিয়র্স (১৯৬৫-১৯৬৬)সহ একাধিক ক্লাবের হয়ে খেলেন।
মেনোত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক জেনারেলস দলের হয়ে খেলেছেন (১৯৬৭), তারপরে ব্রাজিলের সান্তোস (১৯৬৮) এবং ইতালির জুভেন্টাসের (১৯৬৯-১৯৭০) হয়েও তাকে খেলতে দেখা গেছে।
মেনোত্তি ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ জিতে দলটি তার প্রাপ্য স্বীকৃতি পায়নি কারণ দেশটি ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সামরিক জান্তা দ্বারা শাসিত হয়েছিল। তার বিরোধিতাকারীরা প্রায়শই একটি ছবি স্মরণ করতেন যেখানে মেনোত্তি, বিশ্বকাপ জয়ের পরে, সামরিক জান্তার প্রধান হোর্হে রাফায়েল ভিদেলার সাথে করমর্দন করছিলেন।
বিশ্বকাপের প্রাক্কালে, মেনোত্তি ১৭ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়েছিলেন-যে সিদ্ধান্তের জন্য উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি নয়।
মেনোত্তি ১৯৯১-৯২ সালে মেক্সিকো জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। তিনি বার্সেলোনাকেও নেতৃত্ব দেন, যেখানে তার স্কোয়াডে ম্যারাডোনা ছিলেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, উরুগুয়ের পেনারোল, ইতালির সাম্পডোরিয়া এবং মেক্সিকোর টেকোসে ছিল তার শেষ কোচিং জীবন। মেনোত্তি সিগারেটে আসক্ত ছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে তার তামাক আসক্তির কারণে তিন দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তিনি এই অভ্যাস ছেড়ে দেন।
তার লম্বা চুলের জন্যও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন মেনোত্তি। বলতেন, আমার কোনো হেয়ারড্রেসার নেই। আমি চুলের যত্ন নিজেই করি।
মেনোত্তি ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে তার চুল লম্বা রাখতে শুরু করেছিলেন। একজায়গায় রসিকতা করে বলেছিলেন, 'আমাকে না হারানো পর্যন্ত আমি আমার চুল কাটব না। আমরা ১০টি গেমে অপরাজিত রয়ে গেছি'। এই কিংবদন্তি মানুষটি মৃত্যুকে কখনো ভয় পাননি। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে মেনোত্তি আরও একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মেনোত্তির হাত ধরেই সহিংসতাপূর্ণ খেলার কুখ্যাতি থেকে সরে এসে রোমান্টিক ধাঁচের ফুটবল খেলে সমর্থকদের মন জিতেছে আর্জেন্টিনা। মেনোত্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার ফুটবলের অন্যতম গ্রেট আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা। শান্তিতে ঘুমান।’
সূত্র : nbcnewyork.com