শেষের পাতা
নথুল্লাবাদে উত্তেজনা, নেপথ্যে আধিপত্যের লড়াই
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে
৬ মে ২০২৪, সোমবারবরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্টেশনে ২৪ ঘণ্টায়ও থামেনি উত্তেজনা। দফায় দফায় চলছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ভাঙচুর করা হয়েছে ২০টিরও বেশি বাস, থ্রি হুইলার, রিকশা। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হলেও এখন এটি আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়রের দুই গ্রুপ নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড নিয়ে এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। গতকাল দুপুর থেকেই বরিশাল থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। সরজমিন দেখা গেছে, পুরো এলাকা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শনিবার দুপুরে বাসচালককে মারধর, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় প্রথমে সংঘর্ষ শুরু হয়। একবাস চালক ও হেলপারকে বেদম মারধর করে। গুঞ্জন রয়েছে তারা সাবেক মেয়র পক্ষের লোক। গত বছর নতুন মেয়র ক্ষমতায় আসার পরপরই নথুল্লাবাদ বাস স্টেশনের নেতারও পরিবর্তন ঘটে। সাবেক সভাপতি শ্রমিক লীগ নেতা আফতাব হোসেনকে বরখাস্ত করে অসিম দেওয়ানকে সভাপতি করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আফতাব হোসেন সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে ফুল দিয়ে তার সঙ্গে মিশে যান। নতুন কমিটি গঠনের সময় বাদ দেয়া হয় সাবেক মেয়রের সব সমর্থকদের। কেউ কেউ দলবদল করে নতুন মেয়রের গ্রুপে ঢুকে পড়ে। তবে দু’টি গ্রুপই আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। শনিবারের ঘটনায় তা প্রকাশ্যে আসে।
শনিবার ড্রাইভারকে মারধরের পরপরই বঞ্চিতরা ফুঁসে ওঠে। ব্যাপক ভাঙচুর ও ব্যারিকেড দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। নথুল্লাবাদে নতুন মেয়রের ব্যানার ফেস্টুন, বাস মালিক সমিতির সভাপতির ব্যানার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। আর এতে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইটি সামনে চলে আসে। সন্ধ্যায় গুঞ্জন ওঠে আহত বাস ড্রাইভারকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর ফের শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বাস ও থ্রি-হুইলার শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ২৬ জন শ্রমিক ভর্তি হয়েছে বলে উভয়পক্ষ জানান। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ২০-২৫ জন।
শনিবার রাতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতার পর বাস চলাচল শুরু হলেও এবার সংঘর্ষ বাধে থ্রি-হুইলার ও বাস শ্রমিকদের মাঝে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাস ও থ্রি-হুইলার ভাঙচুর করা হয়। আবার বন্ধ হয়ে পড়ে বাস চলাচল। গতকাল দুপুরেও কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকাল পর্যন্ত বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পুলিশ বলছে, নথুল্লাবাদ টার্মিনাল কেন্দ্রিক পরিবহন সেক্টরের শ্রমিক নেতাদের মধ্যে দু’টি গ্রুপ বিদ্যমান। তাদের মধ্যে থাকা বিরোধের সূত্র ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে। ফলে টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে সংঘর্ষ-ভাঙচুর এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্রমিকরা।
জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান বলেন, শ্রমিকদের একটি গ্রুপ প্ররোচনা দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছে। তাই এখনো বাস চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস চলাচল শুরু করার চেষ্টা চলছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা মিডিয়াকে বলেন, দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছি। টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।