অনলাইন
উচ্চ তাপমাত্রার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন, ঝুঁকিতে যারা
স্টাফ রিপোর্টার
(২ সপ্তাহ আগে) ৫ মে ২০২৪, রবিবার, ৬:৩৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
গরমজনিত অসুস্থতার লক্ষ্মণ, করণীয় ও চিকিৎসায় দেশে প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতেই এই জাতীয় নীতিমালা বা গাইডলাইন চালু করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নীতিমালা তৈরিতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে ইউনিসেফ।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন বলা হয়, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে এবং তাপপ্রবাহ না থাকা সময়ের তুলনায় তাপপ্রবাহের সময়ে এই হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর মানে হলো, তাপপ্রবাহের সময়ে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি অনেক বেশি।
রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তীব্র তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, এর প্রভাবে অকাল জন্ম এবং শিশুদের তীব্র তাপপ্রবাহের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় নীতিমালা উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ঢাকার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি হলেও গ্রামের তুলনায় শহরে এর তীব্রতা অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শহরাঞ্চলে নির্বিচারে গাছপালা কাটা হয়েছে। এদিকে যদি নগরবিদরা ব্যবস্থা নেন, তাহলে তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কীভাবে এই গরমে মানুষকে সুস্থ-সবল রাখতে পারি। সেই লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
সারা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুবাই বিমানবন্দরে বন্যায় জলাবদ্ধতা হবে তা আমরা কখনো চিন্তা করিনি। একইভাবে বাংলাদেশেও তীব্র গরমে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা দ্রুত আলোচনা করে বলেছি, যাতে যেসব রোগীর সার্জারি বা চিকিৎসা কিছু সময় পরে করা যাবে তাদের ভর্তি না করতে।
এই নীতিমালাকে একটি সময়োপযোগী কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছরই গরম থেমে যাবে এমনটা না। গরম আরও বাড়তে পারে, বা এমনই থাকতে পারে। এরই মধ্যে এই নীতিমালা এলাকায় পাঠানো হয়েছে। অনলাইনে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্কুলগুলোতেও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের গত কয়েকদিনের যে পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। তাপপ্রবাহ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তখনই আমরা এই নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে গাইডলাইন সম্পর্কে বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতেই এই জাতীয় নীতিমালা বা গাইডলাইন চালু করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে এবং তাপপ্রবাহ না থাকা সময়ের তুলনায় তাপপ্রবাহের সময়ে এই হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর মানে হলো, তাপপ্রবাহের সময়ে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি অনেক বেশি। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ যত বেশি এবং যত তীব্র হবে ঝুঁকি তত বাড়বে। বাংলাদেশে অপরিণত শিশু জন্মের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি (১৬.২ শতাংশ) এবং তাপপ্রবাহে এটি আরও বাড়ে। এছাড়া ইউনিসেফের হিট ফ্রেমওয়ার্কও বি.ই.এ.টি এই নীতিমালা বা গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত। ইউনিসেফের হিট ফ্রেমওয়ার্ক ইংরেজি শব্দাক্ষরের ভিত্তিতে তৈরি।
যেমন-১. গরমজনিত চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন;
২. গরমজনিত চাপের লক্ষণগুলো সহজেই শনাক্ত করুন;
৩. নিজেকে ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন এবং
৪. কারো মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা গেলে তাকে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।
এই নির্দেশাবলির লক্ষ্য হলো, জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো এবং গরমজনিত স্বাস্থ্য উদ্যোগে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। বৃহত্তর কমিউনিটি ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনের মাধ্যমে এই নীতামালা বা গাইডলাইন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডিপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিংহাম প্রমুখ।