অনলাইন
ডিপফেকের শিকার, পুলিশের দ্বারস্থ রণবীর এবং আমির
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ সপ্তাহ আগে) ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৯:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:৩৩ অপরাহ্ন
ভারতে লোকসভা ভোটের আগে ডিপফেক ভিডিওর ছড়াছড়ি। বলিউড অভিনেতা রণবীর সিং এবং আমির খান একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার ডিপ ফেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই মাসের শুরুতে, বলিউড সুপারস্টার আমির খানের ডিপফেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল যাতে তাকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রচার করতে দেখা যায়। ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে অভিনেতাকে বর্তমান ভারত সরকারের নীতির সমালোচনা করতে দেখা গেছে। ভিডিওটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরে, মুম্বাই পুলিশ অ্যাকশনে আসে এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে। ৪১৯ (ছদ্মবেশীকরণ), ৪২০ (প্রতারণা) এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের অন্যান্য ধারা সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) প্রাসঙ্গিক ধারাগুলির অধীনে খানের অফিস খার থানায় এফআইআর দায়ের করেছিল। জানা যায়, নকল ভিডিওর গলা আমির খানের ভয়েস ওভারের মতো শুনতে লাগলেও সেটা সম্পূর্ণ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তৈরি করা। পরে আমির খানের মুখপাত্র একটি বিবৃতি জারি করে বলেন যে-'ভাইরাল ভিডিওটি "ভুয়া"। আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে আমির খান তার ৩৫ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেননি। তিনি অতীতের অনেক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের জনসচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তার প্রচেষ্টাকে উৎসর্গ করেছেন ''।
একইভাবে ডিপফেক ভিডিওর বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছে আরেক বলিউড অভিনেতা রণবীর সিংকে । এবিষয়ে রণবীরের মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, 'হ্যাঁ, আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি এবং রণবীর সিংয়ের এআই-জেনারেটেড ডিপফেক ভিডিও প্রচারকারী হ্যান্ডেলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।' বারাণসী থেকে তোলা রণবীরের ডিপফেক ভিডিওতে রণবীরকে বলতে শোনা যায়, 'মোদীজি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সঠিক। ওঁর উদ্দেশ্য আমাদের দুঃখ-দুর্দশা উদযাপন করা। আমাদের দেশের বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি… আমাদের দেশ অন্যায়ের পথে দ্রুত এগোচ্ছে। তবে আমাদের নিজেদের অধিকার বুঝে নতে হবে। তবে আমাদের নিজেদের বিকাশ এবং ন্যায় চাওয়া বন্ধ করলে হবে না। তাই ভেবেচিন্তে ভোট দিন।' আর ভিডিওর শেষে ফুটে ওঠে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার কথা।' অনেকেই ভেবেছিলেন, রামমন্দিরের উদ্বোধনে ডাক না পেয়ে, সেই ক্ষোভেই হয়ত রণবীর সিং কংগ্রেসের দিতে ঝুঁকেছেন। তবে পরে জানা যায় ভিডিওটি ভুয়ো। পুরোটাই রণবীরের ভয়েস ক্লোন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ভারতীয় সেলিব্রেটিকে টার্গেট করা এই প্রথম ডিপফেক ভিডিও নয়। ক্যাটরিনা কাইফ, আলিয়া ভাট, রশ্মিকা মান্দান্নার মতো একাধিক বলিউড অভিনেতার পাশাপাশি ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ডিপফেকের শিকার হয়েছেন। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ২০২৩ সালের নভেম্বরে ঘোষণা করেছিলেন যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভ্রান্তি, বিশেষত ডিপফেকগুলি শনাক্ত করতে এবং অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ডিপফেকগুলি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটালভাবে একজন ব্যক্তির অনুরূপ ভিডিও করে। ডিপফেকগুলি অডিও, ভিডিও এবং চিত্র-ভিত্তিক হতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ডিপফেকের ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা বলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, তিনি বলেছিলেন, "এই ভিডিওগুলি খুব বাস্তব দেখাচ্ছে তাই, একটি ভিডিও বা ছবির সত্যতা বিশ্বাস করার আগে আমাদের খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভারত এআই -এর জন্য একটি বৈশ্বিক কাঠামোর উপর জোর দিচ্ছে”। ডিপফেক সম্পর্কে স্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ বা আইনের অভাব ভারতীয় পুলিশের পক্ষে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তুলেছে। গোয়া ভিত্তিক ডিজিটাল ফিউচার ল্যাবের নীতি গবেষক আনুশকা জৈন আল জাজিরাকে বলেছেন, "পুলিশ ডিপফেকের প্রভাবের বিরুদ্ধে মামলা করছে ।"
সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা এবং গুগল বিভ্রান্তিকর হতে পারে এমন পোস্টগুলি সরিয়ে বা লেবেল করে ম্যানিপুলেটেড সামগ্রীর সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেটা, যা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মালিক, বলেছে যে " অনেক কারচুপি স্পষ্ট নয় এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, বিশেষ করে ভিডিও সামগ্রীর ক্ষেত্রে"। ইউটিউবের মালিকানাধীন গুগল বলেছে যে " এআই টুল ব্যবহার করাসহ আমরা লেবেলের মাধ্যমে এই ধরনের ভুয়ো সামগ্রী সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করব"।
সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট