অর্থ-বাণিজ্য
তিনদিন ব্যাপী কোল্ড চেইন প্রদর্শনী ১৬ই মে
কুল চেইন উন্নয়নের জন্য সমন্বিত নীতির বাস্তবায়ন চান শিল্প উদ্যোক্তারা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৭:২৯ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের পচনশীল পণ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখতে কোল্ড চেইন ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সমন্বিত কুল চেইন নীতি নির্ধারণ ও কোল্ড স্টোরেজ বাবসায়ীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে এই খাতের উন্নয়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার পল্টনের বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আয়োজিত এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হয়।
দেশে বর্তমানে ৪ শতাধিক কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিয়াজ, টমেটো, গাজর, মাংস, খেজুর সহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ করতে চান উদ্যোক্তারা। এ জন্য সরকারের কাছে কম সুদে মূলধন চান এ খাতের উদ্যোক্তারা।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি সোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৩-১৪%। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আমরা প্রজেক্ট করলে সেটা লাভজনক করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বা বিদেশ থেকে ফান্ড এনে আমাদেরকে ৩-৪% সুদে ঋণ দেয়া হলে আমরা এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারবো। তিনি বলেন, দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে ৪টি করে চেম্বার রয়েছে। যেগুলো দুর্বলভাবে ব্যবসা করছে, সেগুলোর একটি বা দুটি চেম্বারকে বিশেষভাবে পিয়াজ বা অন্য পেরিশেবল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য দরকার বিনিয়োগ, যে সহায়তাটুকু সরকারের কাজ থেকে আমরা চাই।
অনুষ্ঠানে সাপ্লাই চেইনে কোল্ড স্টোরেজ আমাদের কি ভুমিকা রাখতে তা নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড তিনদিন ব্যাপী বসুন্ধরার আইসিসিবিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রেসিডেন্ট, ব্রামা, রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং এবং কোল্ড চেইন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন সংক্রান্ত এফবিসিসিআইয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, পুরো একটি কোল্ড স্টোরেজ আমদানি করতে আমাদের ১% এর মতো শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু যখন এর একটা পার্টস আমদানি করতে হয় তখন আমাদের এই শুল্ক ১৩০% হয়ে যায়। বিনিয়োগের জন্য এটা একটা বড় বাধা। এটা ৩-৫% এর মধ্যে হলে ভালো হয়।
বক্তারা বলেন, ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেই দেশে পণ্যটির সংকট শুরু হয় অথচ আমাদের পিয়াজ নষ্ট হয়। এর জন্য স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ দরকার। তরমুজ, আম, টমেটে, গাজরের জন্য কোল্ড স্টোরেজ দরকার। কারণ হাজার হাজার টন এসব খাদ্য পণ্য উৎপাদন করলেও তা একটা সময় মাঠেই নষ্ট হয়। এখানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্টোরেজ গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, কোল্ড স্টোরেজ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্যের জন্যও দরকার। কারণ অনেক খাবারে প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়, যেটা কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হলে দরকার হবে না। এখানেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুল আলম চৌধুরী।
অপরদিকে এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এ বছর ৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে বলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, গত বছর কোল্ড স্টোরেজে যেসব আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল সেগুলো ৮-১২ টাকা কেজি দরের আলু ছিল। এবার সেই আলু ২৫-৩০ টাকায় কেনা হচ্ছে। কৃষকরা এবার এই দামে আলু বিক্রি করেছে। কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে এসব আলু যখন বাজারে আসবে তখন এর দামও বেশি হবে। ঢাকার বাজারে অবশ্য এখনই ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের কারণে এ বছর অন্তত ২০% আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে সংকট ও বাজার অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পেয়ে কৃষক অন্তত ৩০% আলু তুলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এ বছর ৩০% কম আলু সংরক্ষণ হয়েছে, ঠ্কাুরগাও, রংপুরের মতো জায়গাগুলোতে ১০-২০% কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর বেশি দাম দিয়ে আলু খেতে হবে।